অমিত শাহের আশ্বাসে মান ভাঙল গুজরাতের উপমুখ্যমন্ত্রীর। শপথ গ্রহণের ছ’দিনের মাথায় কার্যভার নিলেন। —পিটিআই থেকে নেওয়া ফাইল চিত্র।
ধুন্ধুমার নির্বাচনে জয় পেতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে আসরে নামতে হয়েছিল দিল্লিকে। সরকার গঠনের পর ফের যে সঙ্কট দেখা দিল, তার নিরসনেও দিল্লিকেই সক্রিয় হতে হল। নিতিনভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হল অমিতভাইয়ের। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি আশ্বাস দিলেন, উপযুক্ত মর্যাদাই দেওয়া হবে তাঁকে। তার পরে মান ভাঙল গুজরাত বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেলের। শপথ নেওয়ার প্রায় ছ’দিন পর কার্যভার গ্রহণ করলেন রূপাণী মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ওজনদার পটেল মুখ।
গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে নিতিন পটেলের মুখটাকে গোটা রাজ্যেই তুলে ধরেছিল বিজেপি। শাসক দলের প্রায় সব হোর্ডিঙে-ব্যানারে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ছবি ছিল। সঙ্গে ছিল মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী, উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেল এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি জিতু বাঘাণীর ছবি। হার্দিক পটেলের নেতৃত্বে যখন পাটিদার সম্প্রদায়ের বিরাট অংশ বিজেপির বিরুদ্ধে পথে নেমে পড়েছিল, তখন নিতিন পটেলের মুখটাকে সামনে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপির সঙ্গে থাকা পাটিদার সম্প্রদায় যাতে হার্দিক পটেলের সৌজন্যে পুরোপুরি হাতছাড়া না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতেই নিতিন পটেলকে তুলে ধরা।
সরকার ফের বিজেপি-ই গড়েছে গুজরাতে। কিন্তু সরকার গঠনের পরে নিতিন পটেলের মনে হয়েছে, উপযুক্ত সম্মান তাঁকে দিচ্ছে না দল। আগের দফাতেও উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নিতিন, এ দফায়ও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই শপথ নিয়েছেন। কিন্তু আগের দফায় নিতিন পটেলের হাতে ছিল অর্থ, নগরোন্নয়ন এবং পেট্রোলিয়াম দফতর। এ বার অর্থ দফতর দিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌরভ পটেলকে। নগরোন্নয়ন এবং পেট্রোলিয়াম নিজের হাতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ভাই রূপাণী।
সঙ্কট আপাতত কাটল। কিন্তু পুরোপুরি কাটল কি? উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিনভাইকে নিয়ে চিন্তায় থাকতে হবে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ভাইকে। ছবি: পিটিআই।
নিতিন পটেলকে এ বার দেওয়া হয়েছে সড়ক ও নির্মাণ, স্বাস্থ্য, স্বাস্থশিক্ষা, নর্মদা এবং আরও কয়েকটি দফতর। এই সব দফতর যে তাঁর পছন্দ নয়, তা সাফ জানিয়ে দেন নিতিন পটেল। নতুন দফতরের কার্যভার গ্রহণ করতে তিনি অস্বীকার করেন। অর্থ, নগরোন্নয়ন এবং পেট্রোলিয়াম দফতর না পেলে তিনি মন্ত্রিত্ব করবেন না বলে নিতিন পটেল জানিয়ে দেন।
সঙ্কট গভীর হচ্ছিল পাটিদার নেতারা নিতিনের হয়ে মুখ খুলতে শুরু করায়। সর্দার পটেল গ্রুপের (এসপিজি) প্রধান তথা প্রবীণ পাটিদার নেতা লালজি পটেল নিতিনের দাবিকে সমর্থন করেন। নিতিনের ‘অবমাননা’র প্রতিবাদ জানাতে পাটিদার আন্দোলনের আঁতুড়ঘর তথা নিতিন পটেলের নিজের কেন্দ্র মেহসানায় ১ জানুয়ারি বন্ধের ডাক দেয় এসপিজি। আর পাটিদার অনামত আন্দোলন সমিতির (পাস) নেতা হার্দিক পটেল আরও একধাপ এগিয়ে নিতিনকে বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসার ডাক দেন। ১০ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে যদি দল ছাড়েন নিতিন, তা হলে কংগ্রেসের সঙ্গে নিতিনের সমঝোতায় তিনি মধ্যস্থতা করবেন এবং নতুন সরকারে নিতিনকে যাতে উপযুক্ত পদ দেওয়া হয়, তাও নিশ্চিত করবেন বলে হার্দিক প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন: তামিল রাজনীতি জমিয়ে দিয়ে ময়দানে রজনীকান্ত
১০ বিধায়ককে নিয়ে নিতিন পটেল দল ছাড়লে বিজেপি সরকারের পতন নিশ্চিত ছিল গুজরাতে। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী বা রাজ্য বিজেপি সভাপতি জিতু বাঘাণী কোনও ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না পরিস্থিতি। শনিবার রাত পর্যন্তও সঙ্কট বেশ গভীর ছিল। অমিত শাহের সক্রিয়তায় রবিবার সকালে কাটল জট। এ দিন গাঁধীনগরে রাজ্য সরকারের সচিবালয়ে গিয়ে নিজের নতুন দফতরগুলির কার্যভার বুঝে নিলেন নিতিন পটেল।
আরও পড়ুন: কত চাকরি হয়েছে, বলতে নারাজ কেন্দ্র
বিজেপি সূত্রের খবর, অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা হওয়ার পরেই মান ভেঙেছে নিতিন পটেলের। নিতিন নিজেও সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন যে, উপযুক্ত দফতরই যাতে তাঁকে দেওয়া হয়, তা অমিত শাহ নিজেই নিশ্চিত করবেন। মেহসানা বন্ধের যে ডাক এসপিজি দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নিতেও অনুরোধ করেছেন নিতিন।