Amit Shah

Amit Shah: রাজ্যে প্রাণ সংশয়! অমিত শাহের নিশানায় বাংলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব সংসদে

শাহের মুখে রাজ্যের সম্পর্কে এই সমালোচনা শুনে তার তীব্র প্রতিবাদ করেন তৃণমূল সাংসদেরা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের কটাক্ষ, ‘‘এঁরা মানুষের রায়ে পশ্চিমবঙ্গে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু সেটা মানতে পারছেন না।’’  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৪৯
Share:

রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার। ছবি পিটিআই।

রাজ্যসভায় বিতর্কের বিষয় ছিল অপরাধী শনাক্তকরণ বিল। কিন্তু বুধবার তা নিয়ে আলোচনার জবাবি বিতর্কে বলতে উঠে আচমকাই পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করলেন অমিত শাহ।

Advertisement

সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যে আইনের শাসন নেই। এমনকি সতীর্থ রাজ্যসভা সাংসদদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘বাংলায় গেলে প্রাণে মারা যেতে পারেন। আমার উপরেও আগুনের গোলা ছোড়া হয়েছিল।’’

শাহের মুখে রাজ্যের সম্পর্কে এই সমালোচনা শুনে তার তীব্র প্রতিবাদ করেন তৃণমূল সাংসদেরা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের কটাক্ষ, ‘‘এঁরা মানুষের রায়ে পশ্চিমবঙ্গে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু সেটা মানতে পারছেন না।’’

Advertisement

বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যে হিংসার অভিযোগে সরব বিজেপি। তার উপরে আনিস খানের মৃত্যু, বগটুই-কাণ্ড ইত্যাদি নিয়ে সম্প্রতি সেই অভিযোগের সুর বহু গুণ চড়িয়েছে তারা। শাহের হাতে বগটুই-কাণ্ডের দলীয় রিপোর্ট কিছু দিন আগে তুলে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এই অবস্থায় এ দিন শাহ যে ভাবে সংসদে দাঁড়িয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা অনেকের। বিশেষত যেখানে ১০ দিন পরেই রাজ্য সফরে আসছেন তিনি। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, একের পর এক হিংসার ঘটনা সামনে আসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে তৃণমূল সরকার যে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ, তা কেন্দ্রের কাছে এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। তবে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ধারণা, উত্তরপ্রদেশ-সহ চার রাজ্যে ভাল ফলের পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীদের মনোবল যে কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়েছে, নিজের সফরের আগে তাতে খানিকটা ইন্ধনও জুগিয়ে রাখলেন শাহ।

অপরাধী শনাক্তকরণ বিল নিয়ে আলোচনায় এ দিন আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহ অভিযোগ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে গুজরাতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই সূত্রেই শাহ বলেন, ‘‘কোনও অন্যায় করেছিলেন, তাই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু সঞ্জয়জি পশ্চিমবঙ্গে গেলে তো প্রাণই চলে যেত।’’ এর প্রতিবাদ জানান তৃণমূল সাংসদেরা। কিন্তু তাতে না থেমে শাহ বলেন, ‘‘২০১৯ সালে (রাজ্যে) প্রচারে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার উপরে আগুনের গোলা ছোড়া হয়েছিল। দলীয় সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়কে ঘিরে ধরে হামলা চালানো হয়।’’ তৃণমূল প্রতিবাদ বহাল রাখলে তিনি বলেন, ‘‘মনগড়া কিছু বলছি না। সব রেকর্ডে আছে। বিষয়টি আদালতের নজরেও এসেছে।’’

শুধু রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা নিয়েও এ দিন শাহ বনাম তৃণমূলের চাপান-উতোরের সাক্ষী থেকেছে রাজ্যসভা। কেন্দ্র ১০২ বছরের পুরনো আইন পাল্টে যে অপরাধী শনাক্তকরণ বিল নিয়ে এসেছে, তা অনুযায়ী, অভিযুক্তের হাত ও পায়ের ছাপের পাশাপাশি চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান এমনকি ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করতে পারবে পুলিশ। ওই বিলে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আটক ব্যক্তিদের শারীরিক মাপজোক ও বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহের অধিকারও দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, এই বিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের পরিচায়ক। এর জবাবে শাহ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছে।’’

সাধারণত কক্ষে অনুপস্থিত কোনও ব্যক্তির নাম নিয়ে অভিযোগ করা যায় না। তাই শাহ মমতার নাম নিয়ে নিয়মভঙ্গ করছেন বলে অভিযোগ তুলে পয়েন্ট অব অর্ডার এনে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন ও অন্যরা। কিন্তু সেই ভুল স্বীকার করেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘মমতা দিদির নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে আপনারা ফ্যাসিস্ট শব্দের যে নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন, তার পরে অন্য কাউকে ফ্যাসিস্ট বলা আপনাদের সাজে না।’’ পরে রাজ্যসভার বাইরে সুখেন্দুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযুক্ত ও অপরাধীর পার্থক্য জানেন না। এদের চেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট আর কে আছে!’’

বিলটি নিয়ে সুখেন্দুর সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়িয়ে পড়েন শাহ। সুখেন্দুর অভিযোগ ছিল, বর্তমানে বিচারাধীন বন্দির ৬০ শতাংশই ওবিসি, সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও নিচু তলার মানুষ। তাই এই বিল পাশ হলে, বৈষম্য আরও প্রকট হবে। শাহের জবাব, ‘‘বিলেও কোথাও ওবিসি, সংখ্যালঘু, বা আদিবাসী সমাজের উল্লেখ নেই। জানি না সুখেন্দুবাবু কোন চশমা দিয়ে বিলটি পড়েছেন।’’

সূত্রের মতে, বগটুই-রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়েই শাহ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওই ছবি ভাল হিসেবে নিচ্ছে না কেন্দ্র। তার পরে এ দিনও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানাতে বিজেপি সাংসদ কিনার হেমব্রম ও লকেট চট্টোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তার পরে সন্ধ্যায় রাজ্যসভায় শাহের এই আচমকা আক্রমণ তাই অনেকের চোখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সূত্রের মতে, আগামী দিনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধানের গণ্ডির মধ্যে থেকেও আক্রমণের সুর আরও চড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি শিবির।

তৃণমূলের পাশাপাশি কেরলের সিপিআই নেতা বিনয় বিশ্বমের দিকেও আক্রমণ শানান শাহ। বিশ্বম বলেছিলেন, শনাক্তকরণ বিল পাশ হলে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতারি বেড়ে যাবে। পাল্টা যুক্তিতে শাহ বলেন, ‘‘আপনাদের কেরলে তো আমাদের দলের একশোর বেশি সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে। আপনার মুখে ওই কথা সাজে না।’’

লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও আজ বিলটি পাশ হওয়ার পরে মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগে সরব হন বিরোধী সাংসদেরা। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ওই বিল আনা হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। লোকসভার ধাঁচে এখানেও সাংসদদের আশ্বাস দিয়ে শাহ বলেন, ‘‘শুধু রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে ধৃতদের কোনও শারীরিক মাপজোক নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ওই আইনের ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক নেতা যদি অপরাধ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু তার শারীরিক ও বায়োলজিক্যাল নমুনা নেওয়া হবে।’’ বিলটি নিয়ে আরও আলোচনা চেয়ে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর জন্য ভোটাভুটির দাবি তোলেন বিরোধীরা। কিন্তু ভোটাভুটিতে সরকার পক্ষ জিতে যাওয়ায় বিল পাশে সমস্যা হয়নি। সংসদের উভয় কক্ষেই বিল পাশ হওয়ায় এ বার রাষ্ট্রপতির সই হলেই আইনে পরিণত হবে বিলটি। বাতিল হয়ে যাবে ১৯২০ সালে ব্রিটিশদের তৈরি আইডেন্টিফিকেশন অব প্রিজনার্স অ্যাক্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement