বরাক-রবি সম্পর্কই বিশেষত্ব রবীন্দ্র-প্রদর্শনে

রবি-প্রদর্শন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শুরু হল একটি প্রদর্শনী। শুক্রবার শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, কলেজের অধ্যক্ষ মনোজ পাল, প্রকৃতিরঞ্জন গোস্বামী এবং সমর রায়চৌধুরী। ছবি: স্বপন রায়। বাঙালি আছে, আর রবীন্দ্রনাথ থাকবেন না? অসম্ভব! এবং সেই কারণেই বরাকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক খোঁজার কোনও বিশেষ চেষ্টা অর্থহীন। সম্পর্ক তো আছেই। এবং নিবিড় সম্পর্ক।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

রবি-প্রদর্শন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শুরু হল একটি প্রদর্শনী। শুক্রবার শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, কলেজের অধ্যক্ষ মনোজ পাল, প্রকৃতিরঞ্জন গোস্বামী এবং সমর রায়চৌধুরী। ছবি: স্বপন রায়।

Advertisement

বাঙালি আছে, আর রবীন্দ্রনাথ থাকবেন না? অসম্ভব! এবং সেই কারণেই বরাকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক খোঁজার কোনও বিশেষ চেষ্টা অর্থহীন। সম্পর্ক তো আছেই। এবং নিবিড় সম্পর্ক।

আর সেই সম্পর্ককেই সঠিক প্রেক্ষিতে নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শিলচরে শুরু হয়েছে এক চিত্র প্রদর্শনী। ইন্দিরা গাঁধী রাষ্ট্রীয় কলা কেন্দ্র ও শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনীটির শিরোনাম ‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: যুগদ্রষ্টা শিল্পী ও কবি’।

Advertisement

সেটা ১৯১৯ সাল। ট্রেনে চড়ে শ্রীহট্ট যাওয়ার পথে রবীন্দ্রনাথ নেমেছিলেন বদরপুরে। সেখানে তাঁকে জানানো হয়েছিল বিপুল সম্বর্ধনা। তাঁর একটি ছড়ায় চার লাইনের এক পংক্তি রয়েছে খোদ শিলচরকে নিয়েই। ‘শেষের কবিতায়’ও শিলচরের উল্লেখ রয়েছে। আর শিলচরের সঙ্গে কবির সব থেকে বড় যোগ সূত্র তো ছিলেন অনিল চন্দ-রানি চন্দ। চন্দ পরিবারের সদস্যরা ছিলেন কবিগুরুর অন্যন্ত ঘনিষ্ট। অনিল চন্দ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সচিব। পরবর্তী কালে তিনি নেহরু মন্ত্রিসভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও হন। এই চন্দ পরিবারের জ্যোৎস্না চন্দ যে পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন তার নাম ছিল বিজয়িনী। নামটি কবিরই দেওয়া। তবে শুধু গুণমুগ্ধরাই নন, রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি নোবেল পুরস্কার পায় ১৯১৩ সালে। আর ১৯১৪ সালে সুরমা-বরাক উপত্যকায় এই কাব্যগ্রন্থটি নিয়ে বাদ-প্রতিবাদও হয়েছিল অনেক। সুরমা পত্রিকায় তিন কিস্তিতে ছাপা হয় গীতাঞ্জলির বিরূপ সমালোচনা। এর প্রতিবাদে উপেন্দ্রকুমার কর দু’টি প্রবন্ধ লেখেন। সুরমা পত্রিকাতেই তা ছাপা হয়। তিনি পরে আরও কিছু প্রবন্ধ যোগ করে ‘গীতাঞ্জলি-সমালোচনা (প্রতিবাদ)’ নামে তা গ্রন্থাকারেও প্রকাশ করেন।

এই সব নানা তথ্য আজ নতুন করে জানল শিলচরের নব প্রজন্ম। প্রদর্শনীটি চলবে সাতদিন ধরে। অবশ্যই আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল প্রদর্শনীর বরাক-কক্ষটি। আইজিএনসিএ-র অধিকর্তা প্রকৃতিরঞ্জন গোস্বামী বলেন, “এই বরাক-কক্ষটিই প্রদর্শনীকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। বরাকের সমস্ত বিষয়, ছবি-তথ্য জোগাড় করেছে মহিলা মহাবিদ্যালয়ই। আমরা শুধু তা অনুমোদন করেছি। এখন দেশের অন্যত্র যে সব প্রদর্শনী হবে সেখানেও ‘বরাক-রবি’ অংশটি প্রদর্শিত হবে। সাধারণ মানুষ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আরও নতুন কথা জানতে পারবেন।”

প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি সমরকান্তি রায়চৌধুরী। ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত জেলাশাসক মধুমিতা চৌধুরী, বীরেন্দ্র বাঙরু, অমলেন্দু ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রকৃতিবাবু এই কলেজকে নোডাল সেন্টার হিসেবে উত্তর-পূর্বে কাজ করার প্রস্তাব দেন। অধ্যক্ষ মনোজকুমার পাল সে প্রস্তাবগ্রহণ করেন। প্রদর্শনীর সঙ্গে তিনটি আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন