দুর্ঘটনার পর আগুনে পুড়ে যাওয়া সেই বাস। শুক্রবার ভোরে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে। ছবি: পিটিআই।
অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে দুই চালক। বাতানুকূল বাসের জানলা ভেঙে যে যাত্রীরা কোনও রকমে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের কাছেই বাসের প্রধান চালক নিন্দিত এবং ধিক্কৃত। সহকারী চালক অবশ্য প্রশংসিত। কারণ দুর্ঘটনার সময় যে চালকের হাতে বাসের স্টিয়ারিং ছিল, তিনি আগুন লাগার পর আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার না-করে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর একই কথা জানিয়েছে পুলিশও। অন্য দিকে, বাসে আগুন লাগার পর সহকারী চালক জানলা ভেঙে যাত্রীদের বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও পুলিশের বক্তব্য, সহকারী চালকের বয়ানে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে।
ইতিমধ্যেই দুই বাসচালকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে কুর্নুলের উলিন্দাকোন্ডা থানায়। দুই বাসচালককেই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে পুলিশ।
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ কুর্নুল জেলার চিন্নাটেকুর গ্রামের কাছে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষের পরেই বাসটিতে আগুন ধরে যায়। পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষের পর বাইকটি বাসের নীচে আটকে যায়। ওই অবস্থায় কিছুটা দূর এগোনোর পরেই বাইরে বিস্ফোরণ হয়। আগুনের স্ফুলিঙ্গ গিয়ে পৌঁছোয় বাসের তেলের ট্যাঙ্কারে। তার পরেই বাসটিতে আগুন লেগে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের বক্তব্য, বাইকটি বাসের তেলের ট্যাঙ্কে ধাক্কা মেরেছিল। সংঘর্ষের অভিঘাতে তেলের ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলে যায়। তেলের ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণের জেরে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাসটিতে।
পুলিশের তরফে এ-ও জানানো হয় যে, আগুন লাগার পর বাতানুকূল ওই বাসে শর্ট সার্কিট হয়। তার জেরে বাসের স্বয়ংক্রিয় দরজা খোলা যায়নি। অনেক যাত্রী দরজা খুলে বেরোনোর চেষ্টা করলেও তা পারেননি। কেউ কেউ মরিয়া হয়ে জানলা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে প্রাণে বাঁচেন। তবে বাসে থাকা ৪০ জন যাত্রীর মধ্যে অধিকাংশই আগুনে ঝলসে যান। মৃত্যু হয় বাসে থাকা ১৯ জন যাত্রী এবং ওই বাইক আরোহীর।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বাসের পিছনের দিকের জানলা ভেঙে ১০ জন এবং বসার আসনের ধারের জানলা ভেঙে সাত জন যাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রীর কথায়, “বাস থেমে যাওয়ার পরেই ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম বাসের একাংশে আগুন ধরেছে। আমরা কয়েক জন মরিয়া হয়ে জানলার কাচে ঘুষি মেরে ভেঙে ফেললাম। চার দিকে ধোঁয়ার মধ্যেই বাইরে ঝাঁপ দিয়ে দেখি অচেতন অবস্থায় কয়েক জন যাত্রী রাস্তায় পড়ে রয়েছেন। আমরা তাঁদের টেনে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে গেলাম।”