৫০ দিন পেরোলে আরও হইচইয়ে মমতারা

নোট বাতিলের সমস্যা মিটিয়ে দেশের অর্থনীতির অবস্থাকে স্বাভাবিক করে তুলতে মানুষের কাছে প্রাথমিক ভাবে ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়সীমা ফুরনোর কথা ২৮ ডিসেম্বর। তার পরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে জোরালো, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে তৎপরতা শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share:

নোট বাতিলের সমস্যা মিটিয়ে দেশের অর্থনীতির অবস্থাকে স্বাভাবিক করে তুলতে মানুষের কাছে প্রাথমিক ভাবে ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়সীমা ফুরনোর কথা ২৮ ডিসেম্বর। তার পরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে জোরালো, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে তৎপরতা শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে।

Advertisement

জাতীয় স্তরে বিরোধী শিবিরের প্রধান শক্তি হিসাবে কংগ্রেসের পরিকল্পনা, গোটা দেশে নতুন উদ্যমে প্রতিবাদে যাওয়ার আগে বিজেপি-বিরোধী সব দলের নেতা-নেত্রীরা এক বার বৈঠকে বসলে সমন্বয়ের সুবিধা হয়। প্রাথমিক ভাবে ঠিক আছে, আগামী ২৭ ডিসেম্বর দিল্লিতে ওই বৈঠক করতে পারেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। সেই বৈঠকে অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিও কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। মমতা প্রথমে ঠিক করেছিলেন নিজে না থাকলেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বৈঠকে পাঠাবেন। কিন্তু সুদীপবাবুকে সিবিআই নোটিস পাঠানোয় তিনি এখন আরও ক্ষিপ্ত। রাহুলও চাইছেন, তৃণমূল নেত্রী নিজে থাকুন। তাই শেষ পর্যন্ত মমতা নিজেই দিল্লি যেতে পারেন বলে একটি সূত্রের খবর। যদিও বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠক সেরে বেরোনোর পথে দিল্লি যাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বয়ং মমতা বলেছেন, ‘‘গেলে জানাব!’’ তবে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে যে সব দল দেরিতে হলেও সুর চড়াচ্ছে, তাদের স্বাগতই জানিয়ে রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী।

বিজেপি-বিরোধী দলগুলির পরিকল্পনা, ৫০ দিনের সময়সীমা পেরোনোর পরে দেশের বড় বড় শহরগুলিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন হোক। বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা সেখানে একসঙ্গে হাজির থাকুন। এই সব পরিকল্পনাই চূড়ান্ত হতে পারে বিরোধী শিবিরের সমন্বয় বৈঠকের পরে। জাতীয় স্তরে যখন এমন তোড়জোড় চলছে, নিজের রাজ্যে মমতা তখন ওই সময়েই দলকে পুরো দমে ফের পথে নামাচ্ছেন। দলের বিধায়ক, সাংসদ, জেলা সভাপতি, পুরপ্রধান, শাখা সংগঠনের প্রধান-সহ প্রায় দেড় হাজার নেতা-নেত্রীকে নিয়ে এ দিন ‘কোর গ্রুপ’-এর বৈঠক করেন মমতা। নোট-সঙ্কটে ভুক্তভোগী মানুষের সুরাহার দাবিতে ১ থেকে ৮ জানুয়ারি— এক সপ্তাহব্যাপী ‘মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগান তুলে জেলায় জেলায় সভা, মিছিল করার ছক সেখানেই তৈরি করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আগের দিন পর্যন্ত সরব থাকলেও এ দিন তিনি সিবিআই নিয়ে কোনও কথা বলেননি।

Advertisement

তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস ১ জানুয়ারি। সেই উপলক্ষে এ বার জেলায় জেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রক্তদান বা বিভিন্ন মেলার পাশাপাশি প্রতি ব্লকে, পাড়ায় পাড়ায় ওই এক সপ্তাহ পথে নেমে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে তৃণমূল। কোন জেলায় কী ভাবে মানুষ হয়রান হচ্ছেন, তার বিশদ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে সব জেলা সভাপতিকে। এর জন্য ২৮ ডিসেম্বর দলের প্রত্যেক জেলা সভাপতি ব্লকের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে রাজ্য নেতৃত্বকে দেবেন। মোদীর বিরুদ্ধে চ়়ড়া সুর বজায় রেখেই মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘দেশের স্বাধীনতার পর থেকে সব থেকে বড় কেলেঙ্কারি এই নোট বাতিল! প্রধানমন্ত্রী আর চার জন মিলে ঠিক যেন আলিবাবা ও চার! তাঁরাই দেশ চালাচ্ছে! অর্থমন্ত্রীও বোধহয় জানেন না সব কিছু!’’ প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি তুলেই ‘মোদী হঠাও’ স্লোগান দিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দাঙ্গা করে যাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছে, তাঁর হাতে দেশ চলতে পারে না!’’

কী ভাবে সংসদীয় রীতি ভেঙে কেন্দ্র নোট বাতিলের বিষয়টি সংসদে এড়িয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে তৃণমূল রাষ্ট্রপতির কাছেও ফের দরবার করবে বলে মমতা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, নোট বাতিলে দেশ জুড়ে আর্থিক সঙ্কটে প্রায় ১০ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। ভিন্‌ রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে এ রাজ্যে কত মানুষ ফিরে এসেছেন, তার তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের। বৈঠকের পরে মমতা বলেন, ‘‘স্বর্ণশিল্পী, হীরের শিল্পী, জরিশিল্পী, নির্মাণ শ্রমিক-সহ বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ হারানো শ্রমিকদের তালিকা তৈরির জন্য সুখেন্দুশেখর রায়কে বলেছি। তালিকা হলে রাষ্ট্রপতিকে দেব।’’

রাজ্যে রাজ্যে সরকারি আমলাদের বাড়ি ও দফতরে কেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তল্লাশি চলছে, তা নিয়ে বুধবারই তোপ দেগেছিলেন মমতা। সেই প্রসঙ্গ তুলেই এ দিন তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অফিসারদের বিরুদ্ধেও জুলুম চলছে এখন। সব অফিসার তো আর খারাপ নন! যাঁরা খারাপ, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও। কিন্তু সবাইকে বুলডোজ কেন করবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement