বিধায়ক জয়কৃষ্ণ পটেল। — ফাইল চিত্র।
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ভারত আদিবাসী পার্টি (বিএপি)-র বিধায়ক জয়কৃষ্ণ পটেলকে গ্রেফতার করল রাজস্থানের দুর্নীতি দমন ব্যুরো (এসিবি)। অভিযোগ, রাজ্য বিধানসভায় তিনটি প্রশ্ন বাদ দেওয়ার জন্য ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন তিনি। এসিবি-র এক ঊর্ধ্বতন কর্তা জানিয়েছেন, রবিবার ঘুষের কিস্তি বাবদ ২০ লক্ষ টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে তাঁকে।
এসিবির ডিরেক্টর জেনারেল রবিপ্রকাশ মেহরদার কথায়, ‘‘রাজস্থান এসিবি-র ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বিধায়ক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন।’’ গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর পরই অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে রাজস্থানের বাঁশওয়ারা জেলার বাগিদোরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৮ বছর বয়সি জয়কৃষ্ণ। অভিযোগ, বিধানসভায় খনি সংক্রান্ত তিনটি প্রশ্ন বাদ দেওয়ার পরিবর্তে খনি ব্যবসায়ী রবিন্দর সিংহের কাছে ১০ কোটি টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন বিধায়ক। যদিও শেষমেশ আড়াই কোটি টাকায় রফা হয়। অভিযোগকারী প্রাথমিক ভাবে জয়কৃষ্ণকে ১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। রবিবার আরও ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। বিধায়ক অভিযোগকারীকে টাকা নিয়ে বাঁশওয়াড়ায় আসতে বলেন। কিন্তু শেষমেশ স্থির হয়, জয়পুরে গিয়ে টাকা নেবেন জয়কৃষ্ণ।
সেই মতো রবিবার সকালে জয়পুরের জ্যোতিনগরে পৌঁছে অভিযোগকারীকে ফোন করে এমএলএ কোয়ার্টারে আসতে বলেন জয়কৃষ্ণ। গোপন সূত্রে খবর পেয়েই সক্রিয় হন এসিবি-র তদন্তকারীরা। টাকা হস্তান্তরের সময় হাতেনাতে ধরা হয় বিধায়ককে। ডিজি-র আরও দাবি, এসিবি-র কাছে জয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে একাধিক অডিয়ো এবং ভিডিয়ো প্রমাণ রয়েছে, যাতে স্পষ্ট তাঁকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে। যদিও রবিবার ধরা পড়ার আগেই বিধায়ক টাকাবোঝাই ব্যাগটি অন্য একজনকে হস্তান্তর করে দেন, যিনি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন। বিধায়ককে ওই ব্যক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এসিবি-র কর্তারা।
জয়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর ভারত আদিবাসী পার্টির (বিএপি) আহ্বায়ক এবং বাঁশওয়াড়ার সাংসদ রাজকুমার রোয়াত বলেছেন, ‘‘এই বিষয়ে এখনই কিছু বলব না। এটি বিজেপি সরকারের ষড়যন্ত্রও হতে পারে। আমরা নিজেরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি এই ঘটনায় সত্যই উনি জড়িত থাকেন, তা হলে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধেও ‘ঘুষ ও উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন’ করার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। অভিযোগ ছিল, ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নিয়ে সংসদে আদানি শিল্পগোষ্ঠী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে লোকসভার এথিক্স কমিটি। শেষমেশ সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হন মহুয়া। যদিও মহুয়া প্রথম থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আবার মহুয়াকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকেই টিকিট দেয় তৃণমূল। তিনি জয়ী হন।