রবিবার শপথগ্রহণের পর রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং তাঁর দুই উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় কুমার সিনহা। ছবি পিটিআই।
পিতা শকুনি চৌধুরী ছিলেন একদা ঘোরতর বিজেপি বিরোধী। ৮৮ বছর বয়সে তিনিও বিজেপিতে। ২০১৫ সালে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিহারের মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কখনও কংগ্রেস, কখনও আরজেডি, কখনও আবার জেডি (ইউ)। বার বার দলবদল করেও বিহারের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক চৌধুরী পরিবার। সেই শকুনি-পুত্র সম্রাট চৌধুরীই রবিবার বিকেলে নীতীশ কুমারের নতুন মন্ত্রিসভায় তাঁর উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। যা নিয়ে বিহারের রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
কারণ, বিহারের রাজনীতিতে সম্রাট বরাবরই নীতীশের কট্টর সমালোচক বলেই পরিচিত। নীতীশের আরও এক উপ-মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বিজেপি নেতা বিজয়কুমার সিন্হা। যিনি আবার রবিবার সকাল পর্যন্ত বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে নীতীশ-তেজস্বী সরকারের প্রবল বিরোধী ছিলেন। নীতীশের শিবির বদলের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর বিহারের রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা ছিল, আবারও তাঁর ডেপুটি হিসেবে সুশীল মোদীকেই ফেরাতে চলেছে বিজেপি। কারণ, সুশীল আবার নীতীশের পছন্দের বিজেপি নেতা। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্ক সরিয়ে রেখে বিহারের রাজনীতিতে প্রবল নীতীশ বিরোধী বলে পরিচিত সম্রাট-বিজয়কে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয় বিজেপি।
তবে বিজয়ের থেকেও সম্রাটকে নিয়েই আগ্রহ বেশি বিহারের রাজনৈতিক মহলে। কারণ, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে বিহার বিজেপির সভাপতি হন সম্রাট। বহুবার দলবদল করা শকুনি-পুত্রকে সভাপতি হিসাবে বিজেপির বেছে নেওয়ার পিছনে বিহারের জাতপাতের সমীকরণ রয়েছে বলে মনে করা হয়। সভাপতির দায়িত্ব পেয়েই নীতীশ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য শপথ নেন সম্রাট। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বেঁধে নীতীশ সরকারের পতন করেই তা খোলার প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। কিন্তু রবিবার সকালে নীতীশের প্রথমে ইস্তফা ও পরে শপথগ্রহণের পর চমকে যান বিহারের রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। এই সময়েই সম্রাট-বিজয়কে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নাম ঘোষণা করে বিজেপি। তারপরেই প্রশ্ন ওঠে, নীতীশের মন্ত্রিসভায় উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি শপথ নিয়ে তাঁর মাথায় পাগড়ির কী হবে? সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবার বিকেলে গেরুয়া পাগড়ি মাথা দিয়েই উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন সম্রাট।
কিন্তু তাঁর মতো কট্টর নীতীশ বিরোধী নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ে বিহারের বিজেপি নেতাদের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। তবে বিহারের এক প্রবীণ রাজনীতিকের কথায়, ‘‘রাজনীতিতে কেউ স্থায়ী বন্ধু বা স্থায়ী শত্রু বলে কিছু হয় না। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে যখন এনডিএ ছেড়ে মহাগঠবন্ধনের সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। তখন তাঁর ডিএনএ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা। বলেছিলেন, নীতীশের জন্য বিজেপির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই নীতীশকেই আবারও জামাই আদরে ফিরিয়ে নেওয়া হল। তাই রাজনীতির ময়দানে পিতা শকুনির থেকে শিক্ষা নেওয়া সম্রাটেরও খুব বেশি অসুবিধা হবে না।’’
বিহারের রাজনীতির কারবারিদের মতে, পিতা শকুনির মতোই সম্রাটও কখনও আরজেডি, কখনও জেডি (ইউ) ঘুরে বিজেপিতে এসে রাজ্য সভাপতি হয়েছেন। বিহারের রাজনীতির আবহাওয়া জানা শকুনি-পুত্রের কাছে রাজনৈতিক পালাবদল কোনও নতুন বিষয় নয়। তাই নীতীশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর কোনও অসুবিধাই হবে না। যে নীতীশকে ‘কু-শাসনবাবু’ বলে আক্রমণ করতেন সম্রাট, তাঁকেই আবার সোমবার থেকে ‘সু-শাসনবাবু’ বলতে শোনা যেতেই পারে বিজেপি সভাপতির মুখে।