উভয় সঙ্কটে অনুরাগ

ক্রিকেট থেকে রাজনীতি, অনুরাগকে ভোগাল কি উচ্চাশা?

ক্রীড়ামন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই পদ দেননি তাঁকে। হাতে ছিল দলের যুব মোর্চার ভার। সুপ্রিম কোর্টে শপথ করে মিথ্যে বলার দায় চাপতেই কালবিলম্ব না করে সেই পদটিও কেড়ে নিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৮
Share:

ক্রীড়ামন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই পদ দেননি তাঁকে। হাতে ছিল দলের যুব মোর্চার ভার। সুপ্রিম কোর্টে শপথ করে মিথ্যে বলার দায় চাপতেই কালবিলম্ব না করে সেই পদটিও কেড়ে নিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শীর্ষ আদালতে এমনিতেই সঙ্কটে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর। এ বার তাঁর রাজনৈতিক জীবনও সঙ্কটের মুখে।

Advertisement

আজ শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে দলের সব সাংসদকে বৈঠকে ডেকেছিলেন মোদী। সকাল সাড়ে ৯টার সেই বৈঠকে যোগ দিতে অনুরাগ আজ সংসদ ভবনে এসেছিলেন বটে। কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যেই তিনি বেরিয়ে সোজা চলে যান বিমানবন্দরে। রওনা হন কলম্বোয়। অনুরাগের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, প্রধান বিচারপতি তীর্থ সিংহ ঠাকুর নিজের অবসরের আগেই লোঢা কমিশন মামলার রায় দিতে চাইছেন। আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি। প্রধান বিচারপতি অবসর নেবেন ঠিক পরের দিন। তাঁর রায় বোর্ডের অনুকূলে যাবে না ধরে নিয়ে এখন থেকেই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে অনুরাগ শিবির। কিন্তু অনেকে বলছেন, ৩ তারিখ যদি রায় না-ও বেরোয়, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের জমানায় অনুরাগরা যে খুব একটা সুবিধে করতে পারবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করছেন, খুব বেশি ‘লম্ফঝম্প’ করতে গিয়েই অনুরাগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন সঙ্কটের মুখে। মন্ত্রিসভার রদবদলের সময় অনুরাগের নজর ছিল ক্রীড়া মন্ত্রকের উপরে। মোদী রাজি হননি। উপরন্তু অনেক দিন ধরেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল অনুরাগের। বিজেপি নেতৃত্বকে বুঝিয়ে শরদ পওয়ারের সমর্থন নিয়ে বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের পদ দখল করেছিলেন তিনি। কিন্তু তখন থেকেই যুব মোর্চায় অবদান কমতে থাকে অনুরাগের। বয়স বাড়তে থাকায় এমনিতেই তাঁকে সরাতে চাইছিলেন অমিত শাহ। গত কাল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, আইসিসি-কে একটি চিঠি লেখার বিষয়ে অনুরাগ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে মিথ্যে বলেছিলেন বলে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন। এর শাস্তি জেল। এর পরে অনুরাগকে সরিয়ে যুব মোর্চার দায়িত্বে প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের কন্যা পুনমকে বসাতে আর দেরি করেননি অমিত শাহ।

Advertisement

অনুরাগ ঘনিষ্ঠরা অবশ্য ঘরোয়া মহলে দাবি করছেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে হিমাচলের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের পারিবারিক সম্পর্ক আছে। সম্প্রতি শিমলায় গিয়ে বীরভদ্রর সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধান বিচারপতি। হিমাচলের উন্নয়নের প্রশংসাও করেছেন। অথচ এই বীরভদ্রের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ আছে। যদিও বিজেপি নেতারাই বলছেন, দুর্নীতির অভিযোগ বীরভদ্রের প্রতিপক্ষ, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমল ও তাঁর পুত্র অনুরাগের বিরুদ্ধেও কম নেই। জনপ্রিয়তা খুইয়েই রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে ধুমল পরিবার। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তৈরি হল, তাতে সুপ্রিম কোর্ট বোর্ডে প্রশাসক নিয়োগ করলে এমনিতেই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বেন অনুরাগ। বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের পদ নিয়ে তিনি সঙ্কটে তো বটেই, তার ওপর মাথায় ঝুলছে জেলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি। এ দিকে, দলের পদও খোয়া গেল তাঁর। এত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছেড়ে মন দিয়ে দলের কাজ করলে বরং আরও উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল অনুরাগ ঠাকুরের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন