বরাবরই উচ্চাকাঙ্ক্ষী অপর্ণা যাদব। টিকিট পেতে ভাসুর অখিলেশের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সপার বিপর্যয় দেখার পর তিনি অন্য কোনও বড় পদক্ষেপের কথা ভাবছেন বলে শোনা যাচ্ছে। —ফাইল চিত্র।
তাঁর ঠিকানা আপাতত লখনউয়ের একটি ভিভিআইপি অতিথিশালা। মু্খ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গোরক্ষপুর ছেড়ে লখনউ যেতে হয়েছে তাঁকে। সেই থেকেই যোগী আদিত্যনাথ ওই সরকারি গেস্ট হাউসের অতিথি। কিন্তু এ অতিথি তো যে-সে অতিথি নন, আপাতত উত্তরপ্রদেশে সরকারের সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল অতিথি তিনি। তাই অতিথির দরবারেই রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাদা-গুচ্চের অতিথির ভিড় লেগে থাকছে। যোগী সুযোগ-সুবিধা মতো দেখা করছেন, কথা বলছেন, সময় দিচ্ছেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে যোগীর দরবারে এমন দু’জনকে হাজির হতে দেখা গেল, যাতে জোর গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলে।
যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে শুক্রবার দেখা করলেন মুলায়ম সিংহ যাদবের পুত্রবধূ অপর্ণা যাদব। একা নন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজনীতিতে আপাত-অনুৎসাহী স্বামী তথা মুলায়মের ছোট ছেলে প্রতীক যাদবও। গোলাপের তোড়া হাতে আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে মিনিট কুড়ি বৈঠক করেন।
সদ্য শেষ হওয়া ভোটযুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল সপা। মুলায়মের পুত্রবধূ সপার টিকিটে লখনউ ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভোটেও লড়েছেন। যদিও বিজেপির রীতা বহুগুণা যোশীর কাছে ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গিয়েছেন। কিন্তু নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর পাঁচ দিন কাটতে না কাটতেই সপার ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র সেই সদস্যাই যোগীর দরবারে হাজির হওয়ায় চমকে গিয়েছেন অনেকেই। অপর্ণা যাদব কি দল বদলের কথা ভাবছেন? ভাসুর অখিলেশ যাদবের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া সপা কি এ বার ব্রাত্য হতে চলেছে যাদব কুলপতির কনিষ্ঠ পুত্রবধূর কাছে? প্রশ্ন এখন এই নিয়েই।
শাশুড়ি সাধনা গুপ্তই অপর্ণার রাজনৈতিক পরামর্শনদাতা, সপা সূত্রে এমনই শোনা যায়। স্বামী প্রতীককে নিয়ে আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কি তা হলে সাধনার পরামর্শেই নিলেন অপর্ণা? জল্পনা এই প্রশ্নকে ঘিরেও। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনের কিছু দিন আগেই ভয়ঙ্কর মুষল পর্বের মুখে দাঁড়াতে হয়েছিল মুলায়মের পরিবার তথা দলকে। এক দিকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, মুলায়মের তুতো ভাই রামগোপাল যাদব এবং সপার অধিকাংশ নেতা-কর্মী। অন্য দিকে মুলায়ম নিজে, তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী তথা প্রতীকের মা সাধনা, ভাই শিবপাল যাদব, দীর্ঘ দিনের সঙ্গী অমর সিংহ। অপর্ণা যাদব এই লড়াইয়ে খোলাখুলি অখিলেশের বিরোধিতায় নেমেছিলেন। অখিলেশ সে সময় মুখ্যমন্ত্রী, অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল কনৌজের সাংসদ। কিন্তু অপর্ণার স্বামী প্রতীক রাজনীতিতে আগ্রহ দেখাননি, আর অপর্ণা নিজেও ভোটের ময়দানে নামার সুযোগ পাননি। অপর্ণা নিজে রাজনীতিতে আসতে চাইছিলেন অনেক দিন ধরেই। কিন্তু নিজের ব্যবসা, জিম এবং বিলাসবহুল গাড়ি-প্রীতি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত প্রতীক যাদব সে বিষয়ে অপর্ণাকে খুব একটা সাহায্য করেননি। শাশুড়ি সাধনা সে সময় অপর্ণার সহায় হয়ে ওঠেন। ছেলেকে রাজনীতিতে আনতে না পেরে ছেলের বউকেই বাজি ধরেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই অপর্ণা সাধনার অনুগামী হয়ে ওঠেন এবং সপায় অখিলেশের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ তাঁর কাছে একেবারেই কাম্য ছিল না।
আরও পড়ুন: ‘যোগী মুখ্যমন্ত্রী হলে তো দাউদ সিবিআই ডিরেক্টর হতে পারে’
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সপার নিয়ন্ত্রণ অখিলেশের হাতেই যায়। অপর্ণা সে সময় আপোসের রাস্তায় হেঁটেছিলেন। অখিলেশের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন। যে আসন থেকে তিনি লড়তে চেয়েছিলেন, সেখান থেকেই টিকিটও পেয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের পর ফের বদলে গেল ছবিটা। সপার পরাজয়ের দায় অখিলেশের উপর চাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন শিবপাল যাদবরা।
শিবপাল, সাধনা, অপর্ণারা আর সপায় না-ও থাকতে পারেন, নতুন দল গড়তে পারেন, এমন জল্পনা উত্তরপ্রদেশে চলছিল। কিন্তু শুক্রবার সকালে গোলাপের তোড়া হাতে অপর্ণা যাদব এবং প্রতীক যাদব যোগী আদিত্যনাথের অস্থায়ী আবাসে হাজির হওয়ায়, জল্পনা অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। তবে কি নতুন দল নয়? এ বার কি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে চলেছেন মুলায়মের ছোট ছেলের বউ? রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন অনীহা দেখিয়ে আসা প্রতীকও কি সেই পথই নেবেন? শুক্রবার সকালে প্রতীক-অপর্ণার সঙ্গে যোগীর ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ এই প্রশ্নই উস্কে দিয়েছে।