‘গ্যাং নয়, খান মার্কেট সবার’

মোদীর মনোভাব টের পাওয়ার পর পূর্ণ উদ্যমে মাঠে নামেন বিজেপির পারিষদেরা।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০৩:৩৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

তার নামে ভোটের মরসুমে কত কথাই না বলা হল! খান মার্কেট কিন্তু আছে খান মার্কেটেই!

Advertisement

চলতি তাপপ্রবাহ ঠেলে বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি দিল্লির অভিজাত সম্প্রদায় ছেনা ছন্দেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিপণিতে। কেউ উঁকি দিচ্ছেন স্পা-তে, কেউ পোষ্যের প্রিয় খাদ্যটি কিনতে ব্যস্ত। তিরিশ বছর ধরে এখানকার পার্কিং লটে ডিউটি করছেন সোমেশ্বর পণ্ডিত। বললেন, ‘‘সবাই নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছে। যাঁরা নিয়মিত বছরের পর আসেন, তাঁরাই আসছেন। এখানে কংগ্রেস, বিজেপি, ট্রাম্প, চিন, সীতারাম, কানহাইয়া— সব পন্থীদের খুঁজে পাবেন।’’

অথচ কিছু দিন আগে প্রায় দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘খান মার্কেট গ্যাং’কে। স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমশ জনপ্রিয় হওয়া এই বিপণি আগে কখনও এহেন আক্রমণের মুখোমুখি হয়নি। জেএনইউ ছাত্র আন্দোলন যেমন ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ বলে তকমা পেয়েছিল, তেমনই ‘খান মার্কেট গ্যাং’ বলতে বোঝানো হচ্ছিল দিল্লির অভিজাত সম্প্রদায়ের একাংশকে, যাঁরা গেরুয়া শিবিরের বিরোধী।

Advertisement

ভোটের ফল প্রকাশের দিন গেরুয়া বেলুনে ছয়লাপ হয়ে যায় খান মার্কেট। তাতে ইন্ধন দিয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব দিল্লির একটি সংবাদপত্রে লিখেছিলেন, ‘‘খান মার্কেটের ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর চিল চিৎকারে কিছু যায় আসে না। মোদীর দু’নম্বর ইনিংসে দেশের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির দিগন্ত থেকে এই গোষ্ঠীকে বাতিল করে দেওয়া উচিত।’’

শুধু রাম মাধবই নন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছুদিন আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি ওই বাজারটিকে পছন্দ করেন না। কেন? তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘খান মার্কেট গ্যাং’ বিজেপিকে হারাতে মরিয়া। এরাই মনমোহন সিংহের উচ্চ ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল বলেও মন্তব্য করেছিলেন মোদী।

মোদীর মনোভাব টের পাওয়ার পর পূর্ণ উদ্যমে মাঠে নামেন বিজেপির পারিষদেরা। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে একটি চিঠি লিখে এক বিজেপি সমর্থক বলে বসেন, খান মার্কেটের নাম বদলে করা হোক ‘বাল্মীকি মার্কেট’! ‘সীমান্ত গাঁধী’ খান আব্দুল গফুর খানের ভাই খান আব্দুল জব্বর খান ছিলেন এই এলাকার প্রথম দিককার দোকানের মালিক। তাঁর নামে এই বাজার শেষ পর্যন্ত মোদীর দ্বিতীয় দফায় নতুন নাম পাবে কি না, সেটা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আপাতত এখানকার পুরনো কাফে আর বুক শপ ‘ফুল সার্কল’-এ গিয়ে দেখা গেল, একই তাকে পাশাপাশি রাখা মনমোহন সিংহ এবং নরেন্দ্র মোদীর বই। প্রায় পনেরো বছর ধরে এই দোকানে বই কিনতে আসেন ষাট ছুঁই ছুঁই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মনীশ চহ্বান। বললেন, ‘‘রাজনৈতিক মতাদর্শের কোনও উত্তরাধিকারের প্রতীক নয় এই মার্কেট। সাধারণ ভাবে উচ্চবিত্ত মানুষই এখানে আসেন বেশি। তাঁদের মধ্যে দক্ষিণপন্থী মানসিকতার মানুষ বেশি থাকারই সম্ভাবনা।’’

খান মার্কেটের অন্যতম পুরনো বইয়ের দোকান ফকির চাঁদ অ্যান্ড সন্স-এর মালিক বামহি পরিবার। স্বাধীনতার পর যাঁরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলেন, এঁরা তাঁদের অন্যতম। পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্য অভিনব বামহি জানালেন, ‘‘ভোটের কিছুদিন আগে থেকে একটা গুঞ্জন কানে কানে ছড়ানো হয়েছিল এখানে। এটা নাকি কংগ্রেসের বাজার! এমন আজব কথা আগে কখনও শুনিনি। এখানে সব ধর্ম, সম্প্রদায় এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের মানুষ আসেন।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement