রাফাল নিয়ে রাহুল গাঁধীকে প্রত্যাঘাত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি।—ফাইল চিত্র।
ঠিক যেন এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছিল বিজেপি। গত কয়েক মাস ধরেই রাহুল গাঁধীর তোলা রাফাল প্রশ্নে নাজেহাল হতে হয়েছে গোটা শাসক শিবিরকে। প্রতিদিন রাফাল চুক্তি ঘিরে নতুন নথি সামনে এসেছে, যার জবাব দিতে কালঘাম ছুটেছে গোটা সরকারের। আজ ১৬তম লোকসভার শেষ দিনে সংসদে সিএজি রাফাল নিয়ে মোদী সরকারকে ক্লিনচিট দিতেই যেন হাঁফ ছাড়ে গোটা দল। শুরু হয় প্রত্যাঘাত। দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলির টুইট, ‘‘সত্যমেব জয়তে।’’
গত কয়েক মাস ধরে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে লাগাতার মোদী-বিরোধিতায় সরব রাহুল গাঁধী। এ নিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে অন্য বিরোধী দলগুলিও। আজ সরকারকে অস্বস্তি থেকে কিছুটা মুক্তি দিল সিএজি রিপোর্ট। যাতে রাফাল প্রশ্নে দুর্নীতির কোনও উল্লেখ না থাকাকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বচ্ছতার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে প্রচারে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। আজ সিএজি রিপোর্টে মূলত বলা হয়েছে, তুলনামূলক বিচারে ইউপিএ সরকারের তুলনায় মোদী সরকার ২.৮৬ শতাংশ কম দামে অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম-সহ রাফাল কিনেছে। তবে প্রতিরক্ষার স্বার্থে প্রতিটি বিমানের দাম জানায়নি সিএজি। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইউপিএ সরকার ১২৬টি বিমান কেনার কথা ভেবেছিল। তার মধ্যে ১৮টি সরাসরি দাসো অ্যাভিয়েশন থেকে কেনার কথা ছিল। বাকি ১০৮টি বিমান এ দেশের হ্যাল সংস্থা তৈরি করত। কিন্তু দর কষাকষি চূড়ান্ত না হওয়ায় ওই চুক্তি হয়নি। মোদী সরকার সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দাসোর থেকে সরাসরি ৩৬টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। চুক্তিতে কোথাও কোনও অস্বচ্ছতার কথা উল্লেখ করেনি সিএজি। বিষয়টিকে কার্যত নৈতিক জয় হিসেবে দেখছে মোদী সরকার।
যদিও সিএজি-র ওই রিপোর্টকে আজ ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে। কিন্তু উজ্জীবিত অরুণ জেটলি সে সব শুনতে রাজি নন। সিএজি রিপোর্ট সংসদে পেশ হতেই টুইটের ঝড় বইয়ে দেন তিনি। নাম না করে আক্রমণ শানান রাহুলকে। জেটলি বলেন, ‘‘এটা হতে পারে না সুপ্রিম কোর্ট ভুল, সিএজি ভুল, শুধু পরিবারতন্ত্র ঠিক।’’ মহাজোটকে কটাক্ষ করে জেটলির টুইট, ‘‘মহাঝুটবন্ধনের মিথ্যে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।’’
সিএজি রিপোর্টে প্রশ্ন অনেক
• রাফালের সঙ্গে যে ১৪ রকম সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে, তার মধ্যে সাতটির দাম ইউপিএ-র তুলনায় বেশি, তিনটির দাম একই, মাত্র চারটি সরঞ্জামের ক্ষেত্রে কম
• মনমোহন সরকারের আমলে দরপত্র অনুযায়ী, দাসো সবচেয়ে কম দামে রাফাল দিচ্ছিল না বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞেরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন। দাসোকে খারিজ করার সুপারিশও ছিল। মোদী সরকার চুক্তি করার ঠিক আগেই সেই রিপোর্ট জমা পড়ে। তারপরেও চুক্তি কেন হল, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই
সিএজি-র আশঙ্কা
• ইউপিএ-র প্রস্তাবিত চুক্তিতে সার্বভৌম গ্যারান্টি অর্থাৎ চুক্তি রূপায়ণে ফ্রান্স সরকারের যে দায়বদ্ধতা ছিল, মোদী সরকারের চুক্তিতে তা নেই।
শুধু চুক্তি রূপায়ণের ইচ্ছা রয়েছে। ফলে জটিলতা হলে ভারতকে আগে দাসোর সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে যেতে হবে। তা শেষ হলে ফ্রান্স সরকার পদক্ষেপ করবে।
• ইউপিএ-র প্রস্তাবিত চুক্তিতে বিমানের কার্যকারিতা ও আর্থিক বিষয়ে গ্যারান্টি ছিল। আগাম টাকা মেটানোর ১৫ শতাংশ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছিল। কিন্তু মোদী সরকারের চুক্তিতে সেই গ্যারান্টি নেই। দাসোর সাশ্রয় হলেও সেই সুবিধা ভারতকে দেওয়া হয়নি।
• ৩৬টি বিমান কিনে বায়ুসেনার প্রয়োজন কীভাবে মেটানো হবে, সে পরিকল্পনা নেই
কংগ্রেসের অভিযোগ
• ভারতের প্রয়োজন মতো যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সাজাতে ১২৬টি বিমানের জন্য ইউপিএ সরকার ১৪০০ মিলিয়ন ইউরো দিতে রাজি ছিল। অর্থাৎ, বিমান প্রতি ১১.১১ মিলিয়ন ইউরো
• মোদী সরকার ৩৬টি যুদ্ধবিমানে একই যুদ্ধাস্ত্র কিনতে ১৩০০ মিলিয়ন ইউরো দিচ্ছে। অর্থাৎ বিমান প্রতি দাম পড়ছে ৩৬.১১ মিলিয়ন ইউরো।
• বায়ুসেনার প্রয়োজন না থাকলেও চার রকমের যুদ্ধাস্ত্র কেনা হচ্ছে
পাল্টা যুক্তিতে কংগ্রেসের বক্তব্য, এনডিএ জমানায় রাফাল চুক্তির সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থসচিব ছিলেন রাজীব মেহর্ষি। বর্তমানে তিনিই সিএজি। কংগ্রেসের দাবি, ২০১৬ সালে রাফাল চুক্তির সময়ে দুর্নীতি হওয়ার কথা মহর্ষি জানতেন। তাই রাফাল সংক্রান্ত রিপোর্টে এমন কিছুই থাকার প্রত্যাশা তারা করেনি যাতে অর্থসচিব হিসেবে মহর্ষির দিকেই আঙুল উঠবে। কংগ্রেস নেতা মল্লির্কাজ্জুন খড়্গের কথায়, ‘‘ওই রিপোর্ট মূল্যহীন। আমরা জনগণের কাছে এর বিচার চাইব।’’