শিল্পায়নে মমতার প্রশংসা, চাল জেটলির

ক’দিন আগেই রীতিমতো হিসেবের তালিকা টেনে এনেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দিয়ে অরুণ জেটলি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর্থিক বরাদ্দের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গকে কোনও ভাবেই বঞ্চনা করছে না কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

ক’দিন আগেই রীতিমতো হিসেবের তালিকা টেনে এনেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দিয়ে অরুণ জেটলি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর্থিক বরাদ্দের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গকে কোনও ভাবেই বঞ্চনা করছে না কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

সেই চ্যালেঞ্জ জানানোর তৎপরতা থেকে আপাত ভাবে কিছুটা সরে এসে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের শিল্পোদ্যোগের প্রশংসা করলেন অর্থমন্ত্রী জেটলি। নিউ ইয়র্কে জেটলির মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রশংসা উস্কে দিয়েছে বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের পরিবেশ নষ্ট করতে শাসক দলের মদতে সিন্ডিকেট রাজ থেকে শুরু করে জঙ্গি আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো সরব বিজেপির শীর্ষ নেতারা। শিল্পায়নের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধ্যানধারণা ও রাজনীতি নিয়ে ঘরোয়া ভাবে প্রবল সমালোচনা করে থাকেন তাঁরা। তা হলে কী এমন ঘটল যাতে জেটলির মতো ব্যক্তিত্বকেও বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রশংসার কথা শোনাতে হচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে, এ কি শুধুই অর্থনীতি? না কি অর্থনীতির মোড়কে রাজনীতির নয়া কৌশল? ভারতে লগ্নি টানতে অর্থমন্ত্রী জেটলি এখন আমেরিকায়। সেখানে ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠকে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পোদ্যোগের উল্লেখ করে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ভারতে শিল্প ও বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে কী ভাবে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারগুলিও সক্রিয়, তা বোঝাতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ টানেন। কলকাতায় শিল্প সম্মেলনের উল্লেখ করেন। যে সম্মেলনে জেটলি নিজে উপস্থিত ছিলেন। বলেন, দীর্ঘদিন বাম শাসিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও এখন শিল্পের উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এ হল চাপের মুখে বিজেপি নেতৃত্বের তৃণমূলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা। এমনিতেই সুষমা স্বরাজের ইস্তফার দাবিতে কংগ্রেস সরব। ইস্তফা না হলে সংসদের আগামী অধিবেশন ভেস্তে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে তারা। সঙ্গে রয়েছে বামেরাও। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব যে তৃণমূলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ তৃণমূল সুষমার ইস্তফার দাবি তোলেনি। লাগাতার চাপের মুখে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল বসুন্ধরা রাজেকে নিয়েও কোনও অবস্থানও নেয়নি। সংসদের বাদল অধিবেশনের আগে তৃণমূলের এই বার্তা আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে কাজে লাগাতে চাইছেন জেটলিরা। সেই বাধ্যবাধকতা থেকেই নিউ ইয়র্কের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাল্টা প্রশংসার রণকৌশল। আমেরিকায় বিনিয়োগকারীদের সামনে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প উদ্যোগের কথা বলে জেটলি রাজ্যের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তার বদলে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে তৃণমূলের সাহায্য নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।

তবে জেটলির মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প সম্মেলনের প্রসঙ্গ অবশ্য নতুন নয়। এর আগে সংসদে যখনই তৃণমূলের নেতারা কোনও আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছেন, তখনই জেটলি কলকাতায় শিল্প সম্মেলনের প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন। বলেছেন, ‘আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে চান। এই আর্থিক সংস্কারে সেই বিনিয়োগের পথই মসৃণ হবে।’ সে সময় এ সব কথা টেনে আনার পিছনেও ছিল রাজনীতির কৌশল। একমাত্র জমি বিল ছাড়া সিংহভাগ ক্ষেত্রেই জেটলি তৃণমূল সাংসদদের এ কথা বলে শান্ত করতে সফল হয়েছেন। কয়লা খনি, খনি ও খনিজ বিলে তৃণমূল সমর্থন করেছে। পণ্য-পরিষেবা কর বিলেও নীতিগত সম্মতি জানিয়ে রেখেছে তৃণমূল।

Advertisement

আর কয়েক দিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে সাহায্য করেছেন, সেখানেই তৃণমূল ও বিজেপির সুসম্পর্কের সুর বাঁধা হয়ে গিয়েছে বলে কংগ্রেস নেতাদের মত। তৃণমূলের নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত চার বছরে ভাল কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তারই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের অনেক শীর্ষ কর্তাই স্বীকার করছেন, মমতা সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখনও রাজ্যের শিল্পের ঝুলিতে বড় মাপের কোনও সাফল্য নেই। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছরও বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে শিল্পায়নের প্রশ্নে মোদী-জেটলির সঙ্গে কোনও সংঘাতে যেতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী তৃণমূলের একাংশের ভাবনা হল, যদি জেটলির সাহায্যে কোনও মার্কিন শিল্পপতি পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন, তা ঢাক পিটিয়ে বলা যেতে পারে। অন্য দিকে, মোদী সরকারের এক বছর কেটে যাওয়ার পরেও অর্থনীতির আকাশে রোদ্দুর ঝলমল করছে না। এর মধ্যে রাজনৈতিক বাধায় সংস্কার আটকে গেলে অর্থনীতির হাল ফেরানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

সেই অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতাতেই তৃণমূলকে পাশে রাখার রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন