লক্ষ্যমাত্রায় পূর্বসূরিরই পথে জেটলি

তাঁর প্রথম বাজেটে পূর্বসূরি পি চিদম্বরমের ছায়া এড়াতে পারলেন না অরুণ জেটলি। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের অন্তর্বতী বাজেট পেশ করতে গিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিলেন, কার্যত তারই প্রতিফলন ঘটল নতুন সরকারের প্রথম বাজেট পরিকল্পনায়। ঘটেছে সংখ্যার সামান্য হেরফের মাত্র। কোথাও কোথাও তাও নয়।

Advertisement

দেবব্রত ঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৬
Share:

তাঁর প্রথম বাজেটে পূর্বসূরি পি চিদম্বরমের ছায়া এড়াতে পারলেন না অরুণ জেটলি। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের অন্তর্বতী বাজেট পেশ করতে গিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিলেন, কার্যত তারই প্রতিফলন ঘটল নতুন সরকারের প্রথম বাজেট পরিকল্পনায়। ঘটেছে সংখ্যার সামান্য হেরফের মাত্র। কোথাও কোথাও তাও নয়।

Advertisement

রাজ্য ও কেন্দ্রের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে খুব ঘটা করেই তৈরি করা হয়েছিল ফিস্কাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট (এফআরবিএম) অ্যাক্ট। ২০০৮ সালের এই আইনে রাজকোষ ঘাটতিকে তিন শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখাই ছিল লক্ষ্য। রাতারাতি তা করা সম্ভব নয়। সুতরাং ধাপে ধাপে তা কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু সাতটি আর্থিক বছর পার করার পরে গত আর্থিক বছরের শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৪.৬ শতাংশে। ২০১৪-১৫ সালের অন্তর্বর্তী বাজেটে চিদম্বরম লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনে ধরেছিলেন ৪.১। তখনই অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য ছিল, ভারতীয় অর্থনীতির নিরিখে এই লক্ষ্যমাত্রা বেশ উচ্চাভিলাষী।

অরুণ জেটলিও ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে চিদম্বরমের লক্ষ্যমাত্রাকেই নিজের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছেন। রাজকোষ ঘাটতি জিডিপি-র ৪.১ শতাংশ। জেটলির কথায়, “আমার পূবর্সূরি খুব কঠিন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে গিয়েছেন।” জেটলি জানিয়েছেন, গত দু’টি আর্থিক বছরের জিডিপি নীচের দিকেই ছিল। শিল্পোন্নয়ন কার্যত স্তব্ধ। পরোক্ষ কর বৃদ্ধিও তেমন হয়নি। পাশাপাশি রয়েছে ভর্তুকির বিপুল বোঝা। এই পরিস্থিতিতে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখা যে কঠিন কাজ তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেটলি। তিনি বলেছেন, “কঠিন জানি। তবু এই লক্ষ্যমাত্রাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করছি।” একই সঙ্গে জেটলি চিদম্বরমের থেকেও এগিয়ে গিয়ে নিজের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছেন। আগামী দু’টি আর্থিক বছরের (২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭) রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য নিজেই বেঁধেছেন যথাক্রমে ৩.৬ ও ৩ শতাংশে। তবে কী ভাবে করবেন, সেই ‘রোডম্যাপ’টি দেননি। ঝুঁকি নিয়েছেন, কিন্তু কী ভাবে সেই ঝুঁকির মোকাবিলা করবেন তা জানাননি।

Advertisement

রাজকোষ ঘাটতি বাঁধতে না পেরে জেটলির আগের দুই অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও পি চিদম্বরমের যুক্তি ছিল--বিশ্ব মন্দা। জেটলিও আগাম বলে রেখেছেন, “ইরাক ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কটজনক পরিস্থিতি অবশ্য আমাদের চিন্তার বিষয় হয়ে রয়েছে। জ্বালানি তেলের দামের উপর তার প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে এ বারের বর্ষাও খুবই অনিশ্চিত।”

ঘাটতি কমিয়ে আনতে জিডিপি বাড়ানোর নির্দিষ্ট দিশাও দেননি, ভর্তুকি কমিয়ে আনার বিষয়টি নিয়েও কার্যত কিছুই বলেননি। সাধারণ ভাবে আগামী ৩-৪ বছরের নিরিখে তাঁর বক্তব্য, “এটা শুরু। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে (জিডিপি) ৭ থেকে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে, রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি (সিএডি) কমিয়ে, সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেই এটা করা সম্ভব।” একই সঙ্গে তিনি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “৪৫ দিনের সরকারের এই বাজেটে সব কিছু আশা করাটা উচিত হবে না।” জেটলি আরও একটু সময় চান।

শুধু রাজকোষ ঘাটতিই নয়, পরিকল্পনা বরাদ্দ ও পরিকল্পনা-বহির্ভূত বরাদ্দের ক্ষেত্রেও জেটলি চিদম্বরমের অন্তর্বর্তী বাজেটের কার্যত প্রতিধ্বনি করে গিয়েছেন। চিদম্বরমের অন্তর্বর্তী বাজেটে পরিকল্পনা বরাদ্দের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। জেটলি তা বাড়িয়ে করেছেন ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের শেষে পরিকল্পনা বরাদ্দ লক্ষ্যমাত্রার অনেক নীচে গিয়ে দাঁড়ায়। ধরা হয়েছিল ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার কোটি, খরচ হয় ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি। জেটলি পরিকল্পনা খাতে তার থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা বেশি খরচ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। শতাংশের হিসেবে বৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ। তাঁর পূর্বসূরি পরিকল্পনা-বহির্ভূত বরাদ্দ ধরেছিলেন ১২ লক্ষ ৭ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। জেটলি ধরেছেন ১২ লক্ষ ১৯ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, গত আর্থিক বছরের নিরিখে পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাতেও জেটলিকে ১ লক্ষ কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। বৃদ্ধি ৯.৪ শতাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন