Asim Ghosh becomes Governor

রাজ্যপাল হচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির শেষ ‘নির্বাচিত সভাপতি’! ভোটে জিতেই কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন শমীক-রাহুলদের

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কারণে ১৯৯৯ সালে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদ ছাড়তে হয় তপন শিকদারকে। সে সময়ে প্রথমে সাংগঠনিক নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয় অসীমকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪২
Share:

(বাঁ দিক থেকে) শমীক ভট্টাচার্য, অসীম ঘোষ এবং রাহুল সিংহ। —ফাইল চিত্র।

সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে দৈনন্দিন যোগাযোগ থেমে গিয়েছিল বছর বিশেক আগেই। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে কয়েকটি সাংগঠনিক কর্মসূচিতে ডাক পাচ্ছিলেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘প্রবীণ চিন্তক’ হিসেবে দল তাঁর মতামত নিচ্ছিল। অনেককে চমকে দিয়ে এ হেন অসীম ঘোষের নামই রাজ্যপাল হিসেবে ঘোষিত হল। হরিয়ানার রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর নাম সোমবার ঘোষণা করল রাষ্ট্রপতি ভবন। রাজ্য বিজেপির শেষ নির্বাচিত সভাপতি অসীম শীঘ্রই চণ্ডীগড় পৌঁছে দায়িত্বভার বুঝে নেবেন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই নিয়ে চতুর্থ ব্যক্তি রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। কংগ্রেস জমানায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় গিয়েছিলেন পঞ্জাবের রাজ্যপাল হয়ে। পরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় রাজ্য বিজেপির আর এক প্রাক্তন সভাপতি বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রীকে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল করা হয়। নরেন্দ্র মোদীর আমলে প্রথমে ত্রিপুরা এবং পরে মেঘালয়ের রাজ্যপাল করা হয়েছিল তথাগত রায়কে। তিনিও এককালে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি ছিলেন। এ বার বঙ্গ বিজেপির আর এক প্রাক্তন সভাপতি রাজ্যপাল হচ্ছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অসীম উত্তর কলকাতার শ্রীশচন্দ্র কলেজে পড়াতেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, ১৯৯১ সালে প্রভাকর তিওয়ারির হাত ধরে তাঁর বিজেপিতে যোগদান। সে বছরই কাশীপুর বিধানসভা আসনে তিনি বিজেপির প্রার্থী হন। জিততে পারেননি। কিন্তু সেই থেকে সক্রিয় রাজনীতি শুরু। সুবক্তা হওয়ায় সাংগঠনিক কাঠামোতেও তরতর করে উন্নতি করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক হন। ১৯৯৮ সালে তাঁকে সহ-সভাপতি করা হয়েছিল।

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কারণে ১৯৯৯ সালে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদ ছাড়তে হয় তপন শিকদারকে। সে সময়ে প্রথমে সাংগঠনিক নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয় অসীমকে। ২০০০ সালে সাংগঠনিক নির্বাচনে প্রবীণ বিজেপি নেতা সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৩৪ ভোটে হারিয়ে অসীম সভাপতি নির্বাচিত হন। অসীম বনাম সুকুমার লড়াই ঘিরে সে সময়ে আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়েছিল রাজ্য বিজেপিতে। দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, রাহুল সিংহ, কর্নেল সব্যসাচী বাগচী, পরশ দত্তের মতো প্রভাবশালী নেতারা সে সময়ে সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ছিলেন। অন্য দিকে অসীম ছিলেন তপন শিকদার সমর্থিত প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত আরএসএসের সমর্থন অসীমের দিকে যাওয়ায় তিনিই জয়ী হন। আর সেই ধুন্ধুমার সাংগঠনিক নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে শমীক, রাহুল, সুকুমার, সব্যসাচী, পরশদের প্রত্যেককে অসীম নিজের কমিটি থেকে সরিয়ে দেন।

২০০২ সাল পর্যন্ত অসীম দলের রাজ্য সভাপতি পদে ছিলেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হতেই রাজ্য বিজেপিতে আবার রাহুল-শমীকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁদের পছন্দের তথাগত রায় সভাপতি পদে বসেন। অসীম ঘোষকে পরে কিছু সময়ের জন্য জাতীয় স্তরের কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের কারণে ধীরে ধীরে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে অসীমের যোগ কমতে থাকে। দলীয় বৃত্ত থেকে একটা সময়ে প্রায় পুরোপুরিই হারিয়ে গিয়েছিলেন হাওড়া নিবাসী প্রাক্তন অধ্যাপক। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে বিরোধের জেরে দূরে সরে যাওয়া, তাঁদেরই অন্যতম রাহুলের সভাপতিত্ব কালে আবার দলের বৃত্তে অসীমের যাতায়াত শুরু হয়।

সম্প্রতি দলের নানা কর্মসূচিতে অসীমের সেই যাতায়াত আরও বেড়েছিল। নতুন রাজ্য সভাপতির মনোনয়ন পর্ব, নাম ঘোষণা এবং অভিনন্দন পর্ব, সবেতেই অসীমকে সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছিল। তাঁকে রাজ্যপাল করা হতে পারে, এমন গুঞ্জনও বিজেপির অন্দরে ছিল। সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর তরফ থেকে সে কথা ঘোষণাও করে দেওয়া হল।

হরিয়ানার রাজ্যপাল হিসেবে অসীমের নাম ঘোষণার পাশাপাশি গোয়ার রাজ্যপাল হিসেবে পিএ গজপতি রাজুর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত লাদাখের উপরাজ্যপাল হিসেবে ঘোষিত হয়েছে কবীন্দ্র গুপ্তের নাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement