প্রতীকী ছবি।
সিয়াং ও ব্রহ্মপুত্রের জলের রং ও প্রকৃতি বদল নিয়ে স্থানীয় মহল থেকে চিনের দিকে আঙুল উঠেছে আগেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রী অর্জুনলাল মেঘওয়াল সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, প্রাকৃতিক কারণে এই পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু অসম সরকার তা মানতে নারাজ। এ বিষয়ে কেন্দ্রকে দু’টি চিঠি দিয়েছে তারা। কেন্দ্রের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় অরুণাচল প্রদেশও।
তিব্বতের সাংপো নদী অরুণাচলে ঢুকে নাম পেয়েছে সিয়াং। অসমে এসে সেটা হয়েছে ব্রহ্মপুত্র। এই সিয়াং ও ব্রহ্মপুত্র দিয়ে ঘোলা জল আসা নিয়ে চিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা এবং ব্রহ্মপুত্র ও তিব্বত থেকে আসা সব নদীর ‘হাইড্রলজিক্যাল ডেটা’ চেয়ে চিনকে চাপ দেওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে অসম সরকারের চিঠিতে।
এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ব্যাখ্যা উড়িয়ে দিয়েছেন অরুণাচল প্রদেশের সাংসদ নিনং এরিং। প্রাকৃতিক কারণের তত্ত্ব খারিজ করে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আজ সরব হন তিনি। চিনে বড় কোনও ভূমিকম্পের কারণেও এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলে কেন্দ্র জানাচ্ছে। সেই ব্যাখ্যা নস্যাৎ করে সাংসদ এরিং জানান, একশো বছরে এমন ঘটনা ঘটেনি। এত বড় ভূমিকম্প হলে তার রেশ ভারতেও পড়ত। জানা যেত। তেমন কিছুই জানা যায়নি। শীতকালে বরাবর স্বচ্ছ থাকে সিয়াং। এ বছর কালচে কাদা জলের জন্য ডায়িং-এরিং অভয়ারণ্যে পরিযায়ী পাখিরা আসেনি। অনেক জলজ প্রাণী ও গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর আসছে। রাজ্যের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন আপসুর মতে, সিয়াংয়ের বিপন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র অবৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিচ্ছে। বিষয়টি ঢাকতে চাইছে তারা। কেন্দ্র ও রাজ্য এমন চালাতে থাকলে সিয়াং উপত্যকা ধ্বংস হয়ে যাবে।
অসমের জলসম্পদমন্ত্রী কেশব মহন্তের বক্তব্য, কেন্দ্রের ধারণা বড় ভূমিকম্পের ফলে রং বদলে গিয়েছে সিয়াংয়ের। সম্ভবত পাহাড়ের বিরাট কোনও অংশ ভেঙে পড়ে জলে মিশেছে। ব্রহ্মপুত্রের জলও পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ধেমাজিতে যেখানে সিয়াংয়ের জল অসমে ঢুকছে, সেখানেও জল পরীক্ষা করে অত্যধিক কাদা-বালি মিলেছে। এর পিছনে চিনের ভূমিকা রয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কাছে।
অসমের বিভিন্ন অংশে ব্রহ্মপুত্রের জলে অত্যধিক বালি-কাদা মিলতে থাকায় রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জল-পরীক্ষা চালিয়েছিল। পরীক্ষকেরা জানান, জলে খারের পরিমাণ মিলেছে ৭.২। লোহা এবং ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা অত্যন্ত বেশি। এই জল একেবারেই পানের যোগ্য নয়। অসমের তেজপুরে সংগৃহীত ব্রহ্মপুত্রের জলে অস্বচ্ছতার মাত্রা প্রতি মিলিমিটার জলে ১৬২ এনটিইউ। বিএসআই মান অনুযায়ী স্বাভাবিক মাত্রা ০ থেকে ১০ এনটিইউ। যত দিন না জল ফের পরিষ্কার হচ্ছে, তা ব্যবহার করা ঠিক হবে না। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন। রাজ্যের জলের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী রিহন দৈমারি জানান, ব্রহ্মপুত্রের জল পরীক্ষার জন্য আইআইটির সাহায্য নেওয়া হবে।