এভাবেই নদী পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয় কচিকাঁচাদের। ছবি: এএনআই-এর টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া
বর্ষার ভরা নদী। বিপুল জলস্রোত। বড় বড় অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় ভাসছে স্কুল পড়ুয়ারা। দাঁড়ের মতো দু’হাত দিয়ে জল টেনে পার হয়ে যাচ্ছে নদী। যাত্রীরা সবাই পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সের খুদে পড়ুয়া। সামান্য ব্যালান্স হারালেই নিশ্চিত সলিল সমাধি। এক-দু’দিন নয়, অসমের একটি স্কুলে কচিকাঁচাদের যাওয়া-আসার এক ও একমাত্র ‘বাহন’ এই গামলাগুলিই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এ ভাবেই ‘শিক্ষা’ নেয় শিশুরা। বাইরে প্রতিদিন জীবন-মৃত্যুর পরীক্ষায় বসতে হয় এই খুদে পড়ুয়াদের। অসহায় শিক্ষকরা। ‘লজ্জিত’ বিধায়ক।
এই ছবি অসমের বিশ্বনাথ জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সুটিয়ার। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তোলপাড়। নেটিজেনরা প্রশাসন, নেতা-মন্ত্রীদের তুলোধোনা করছেন। শিউরে উঠেছেন বহু মানুষ। নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, স্বাধীনতার সাত দশক পরেও এই ভারতের ছবি দেখতে হবে কেন?
ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছে খুদে পড়ুয়ারা। বড় বড় অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় বসে পড়ছে। বইয়ের ব্যাগ কোলে রেখে ঠিক করে নিচ্ছে ব্যালান্স। তারপর ধীরে ধীরে ঠেলে নেমে যাচ্ছে নদীতে। দু’হাতে জল টেনে পৌঁছে যাচ্ছে নদীর অন্য পাড়ে।
স্কুলের শিক্ষকরাও অসহায়। জে দাস নামে এক শিক্ষক বললেন, ‘‘এ ভাবে অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় নদী পেরিয়ে স্কুলে যাওয়ার এই দৃশ্য আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু কী করব? কিছুদিন একটা কলার ভেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তা-ও নেই।’’
আরও পডু়ন: রানওয়েতে নামতে গিয়ে হ্রদে নেমে পড়ল যাত্রিবাহী বিমান!
লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক প্রমোদ বরঠাকুর। তাঁর কথায়, ‘‘এই ছবি দেখে আমি লজ্জিত। ওই এলাকায় রাস্তা নেই, নদীতে ব্রিজ নেই। তবু কেন জানি না, ওখানে ওই দ্বীপের মতো জায়গায় স্কুল করল সরকার। আমরা অবিলম্বে জেলা প্রশাসনকে বলে একটি নৌকার ব্যবস্থা করব।’’
আরও পড়ুন: শবরীমালা মন্দিরে ঢুকতে পারবেন সব বয়সের মহিলারা, রায় সুপ্রিম কোর্টের
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি ওই এলাকার বিধায়ক হয়েও এই ভয়ঙ্কর দুর্দশার কথা কেন জানেন না। নাকি জেনে বুঝেও গুরুত্ব দেননি? সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো পোস্ট হওয়ার পর মুখ পুড়েছে বলেই কি তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস!