কে চন্দ্রশেখর রাও।
এক জনের ভরসা জোটের রসায়ন। অন্য জনের উন্নয়ন। অনেকেই মনে করছেন, দাক্ষিণাত্যই হয়তো ভাগ্য গড়বে দিল্লির! ২০১৯-এর মসনদ কারা দখল করবে, সেই ইঙ্গিত মিলবে তেলঙ্গানার ১১৯ আসনের নির্বাচনে!
প্রথম জনটি হলেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। যাঁর উদ্যোগে ও রাহুল গাঁধীর সক্রিয়তায় তেলঙ্গনার মাটিতে প্রথম তৈরি হয়েছে মহাজোট। পোশাকি নাম মহাকুটুমি। তেলঙ্গনায় তার সাফল্যের অর্থই হল জাতীয় স্তরেও বিরোধী জোটকে এক করার প্রশ্নে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন চন্দ্রবাবু।
অন্য দিকে শাসক তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির কে চন্দ্রশেখর রাও। যাকে পিছন থেকে সাহায্য করছে বিজেপি। কিন্তু তারা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছে, মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের পরিস্থিতি ভাল নয়। ছত্তীসগঢ়ও সংশয়ে। এর পরে যদি তেলঙ্গানাও হাতছাড়া হয়, তা হলে ২০১৯-এর আগে সমূহ সঙ্কট। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমে মহাজোট, তার পরে সনিয়া-রাহুলের টানা প্রচারে তুলনায় অনুন্নত দক্ষিণ তেলঙ্গনায় অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি আসন জেতার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস। জোট হওয়ায় নিচুতলায় কর্মী অসন্তোষ কম। অন্য দিকে তেলঙ্গনায় বসবাসকারী প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ অন্ধ্রবাসী একজোট হয়েছেন নায়ডুর সম্মান বাঁচাতে। তেলঙ্গনার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা জনগাঁও এলাকার কংগ্রেস প্রার্থী পি লক্ষ্মাইয়ার কথায়, ‘‘ম্যাচ এখন ফিফটি-ফিফটি। শুরুতে কেসিআরের যে অ্যাডভানটেজ ছিল, তা অনেক কমিয়ে আনা গিয়েছে।’’
পিচ ঘুরছে দেখে স্লগ ওভারে নামানো হয়েছে হায়দরাবাদের মুসলিম মুখ আজহারউদ্দিনকেও। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা টি রেড্ডি বলেন, ‘‘তেলঙ্গানার মুসলিমরা মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। পুরনো হায়দরাবাদে সাতটি আসনে সংখ্যালঘুদের মসিহা হলেন এমআইএম-র আসাদউদ্দিন ওয়েসি। দলের লক্ষ্য তাই রাজ্যের অন্যত্র সংখ্যালঘু ভোটকে কংগ্রেসের ছাতার তলায় নিয়ে আসা।’’
আসলে আগের বার বিধানসভা ভোট হয়েছিল তেলঙ্গনার আবেগে। এ বার কিন্তু ভোট উন্নয়ন ও রণকৌশলের। সেটা কেসিআর-কে কিছু সুবিধা যেমন দিচ্ছে, তেমন অসুবিধাও বড় কম নয়। গত ক’দিনে তেলঙ্গনার আড়ে-বহরে ঘুরে একটি বিষয় স্পষ্ট— বিদ্যুৎ, সড়ক নির্মাণ এবং কিছু ক্ষেত্রে জলের সমস্যা সমাধানে সাফল্য পেয়েছেন কেসিআর। কিন্তু নিরবিচ্ছন্ন পানীয় জল ও খেতে সেচের জল যাচ্ছে কেবল মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র গজওয়েল, তাঁর ভাগ্নের কেন্দ্র সিরসিল্লা-সিদ্দিপেটেই। বাকিদের অবস্থা যা ছিল তা-ই। জলের পাইপ পড়েছে, আকাশ চিরে উঠেছে বড়-বড় ট্যাঙ্ক। কিন্তু জলশূন্য সেই ট্যাঙ্ক অস্বস্তিই বাড়াচ্ছে টিআরএসের। ভোটের চিঁড়ে ভেজাতে তাই ট্যাঙ্ক ঘুরছে বাড়ি-বাড়ি। আবার চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুত পেয়ে বড় চাষিরা টানা বোরিং করে মাটির জল তুলে ফেলায় উত্তরে ওরাঙ্গল, জলগাঁও বা দক্ষিণে মেহবুবনগরে জলস্তর নেমে গিয়েছে কয়েক ধাপ। গরিব চাষিদের সমস্যা বেড়েছে বই কমেনি।
কেসিআরের রায়তুবন্ধু প্রকল্প নিয়েও নিচুতলায় অসন্তোষ আছে। একর প্রতি চার হাজার টাকা পাচ্ছেন জমির মালিকেরা। জমিতে কাজ করা ভাগচাষিরা থেকে যাচ্ছেন বঞ্চিতই। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও টিআরএস বিধায়কদের আর্থিক রমরমা ভোটারদের মনে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। শেষ রাউন্ডে তাই বেশ টেনশনেই আছেন কেসিআর।