ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিরুদ্ধে এ বার কংগ্রেসের প্রার্থী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি করুণা শুক্ল। হুডখোলা জিপে তাঁর হয়েই প্রচার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর। রাজনন্দগাঁওয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
দিল্লির রাজপথে ১৭ অগস্টের ছবিটা এখনও স্মৃতিতে টাটকা। প্রবল গরমের মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ীর শেষযাত্রায় তাঁর মরদেহবাহী শকটের সঙ্গে ঘেমে নেয়ে পথ হাঁটছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।
তিন মাস পরে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিধানসভা কেন্দ্র রাজনন্দগাঁওয়ের উপচে পড়া ভিড় হাঁ হয়ে দেখল, সেই বাজপেয়ীর ভাইঝি করুণা শুক্লকে জিপে নিয়ে বিরাট রোড শো করছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।
ছত্তীসগঢ়ের ভোটে এ বার রাহুল গাঁধীর রাজনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক এটাই। মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের বিরুদ্ধে বাজপেয়ীর ভাইঝি করুণা শুক্লকে কংগ্রেসের প্রার্থী করা।
প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বাজপেয়ীই পৃথক রাজ্য ছত্তীসগঢ় তৈরি করেন। রমন সিংহকেও তাঁর ক্যাবিনেটে শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। বাজপেয়ীর শিষ্য রমন ঘোষণা করেছেন, রাজ্যের নতুন রাজধানী, নয়া রায়পুরের নাম হবে বাজপেয়ীর নামে— অটল নগর। রাজনন্দগাঁওতে যেখানেই রমন সিংহের হোর্ডিং, সেখানেই তাঁর পিছনে বাজপেয়ী। আর সেখানেই কিনা রমনকে আক্রমণ করছেন ৬৮ বছরের করুণা। বাজপেয়ীর মৃত্যুর পরে গোটা দেশে তাঁর অস্থিকলস বিসর্জন নিয়ে বিজেপির রাজনীতির কড়া নিন্দা করেছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “বাজপেয়ী বেঁচে থাকতে বিজেপির নেতারা তাঁর খোঁজ নেননি। মৃত্যুর পর গোটা দেশে অস্থিকলস নিয়ে দেখনদারি করেছেন। এখন রমন তাঁর নামে ভোট চাইছেন।”
করুণার জিভের ধার থেকেই স্পষ্ট, তাঁর শরীরে বাজপেয়ীর রক্ত। রাজনন্দগাঁওয়ের ভোট এ বার তাই বাজপেয়ীর আবেগ বনাম বাজপেয়ীর আবেগ।
অটলবিহারীরা ছিলেন সাত ভাই-বোন। তাঁদের মধ্যে অবধবিহারীর কন্যা করুণা। বাজপেয়ীর মতো তাঁরও জন্ম গ্বালিয়রে। রাজনীতিতে হাতে খড়ি অবশ্য বিজেপিতেই। প্রথমে বিধায়ক। তার পর ২০০৪-এ জাঞ্জগির লোকসভা থেকে সাংসদও হয়েছেন। ২০০৯-এ কংগ্রেসের নেতা চরণদাস মহন্তের কাছে হেরে যান। ২০১৪-য় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর উত্থানের পরেই দল ছাড়েন করুণা। ৩২ বছরের বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন। করুণা স্পষ্টবাদী, “যাঁরা নিজেদের প্রবীণ গুরুদের সম্মান করে না, তাঁদের সঙ্গে এক দলে থাকি না”।
১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থাকা রমন সিংহকে করুণা কি বেগ দিতে পারবেন? রাজনন্দগাঁওের ঘোর বিজেপি সমর্থক মহেশ যাদব মুচকি হেসে বলেন, “জানেন তো, রমনজি আয়ুর্বেদিক ডাক্তার। এখনও নাড়ি টিপে রোগ বলে দিতে পারেন। রাজনন্দগাঁওয়ের নাড়ি-নক্ষত্রও ওঁর জানা। গত বারও ৩৫ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন।”
করুণা কিন্তু ছুটছেন। চাষিদের সমস্যার কথা বলছেন। রাজস্ব আয় বাড়াতে রমন সরকারের মদের দোকানে ঢালাও লাইসেন্সের প্রশ্ন তুলে মহিলাদের পাশে টানার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁর প্রধান অস্ত্র, বাজপেয়ীর প্রতি মোদী-অমিত- বিজেপির অবহেলা।
রমনের ছেলে অভিষেক সিংহ রাজনন্দগাঁওয়ের সাংসদ। বাপ-ছেলে কেউই করুণাকে সরাসরি আক্রমণ করছেন না। শুধু হতাশার সুরে বলছেন, করুণাদেবী কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বাজপেয়ীর আদর্শ বিসর্জন দিয়েছেন। আর করুণার পাল্টা জবাব, “বিজেপি এখন বাজপেয়ীকে শুধুই ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে দেখে। অথচ এত দিন সরকারি উত্সব-অনুষ্ঠানে তাঁর নামোচ্চারণও হত না।”