ফাইল চিত্র।
আদর্শ প্রধানমন্ত্রী কেমন হওয়া উচিত? অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মরণসভায় নরেন্দ্র মোদীকে যেন সেই কথাটিই বোঝাতে চাইলেন বিরোধীরা। বাজপেয়ীকে সামনে রেখে মোদী আজ সমস্ত বিরোধী নেতাকে একই মঞ্চে আনতে সক্ষম হলেন ঠিকই, কিন্তু পরোক্ষ সমালোচনার শিকারও হতে হল তাঁকে।
দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে আজ বাজপেয়ী স্মরণ-সন্ধ্যার আয়োজন করেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সেখানে বাজপেয়ীর তুলনা টেনে বিরোধীরা কার্যত মোদীকে বোঝালেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কী ভাবে রাজধর্ম পালন করতে হয়। ঠিক যে পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী।
শুরুতে বলতে উঠে নরেন্দ্র মোদী নিজে প্রশাসক হিসেবে বাজপেয়ীর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বললেন, ‘‘জোটের শরিকদের নিয়ে একসঙ্গে চলার ক্ষমতা ছিল বাজপেয়ীর।’’
দীর্ঘ দিনের সহকর্মী লালকৃষ্ণ আডবাণী জোর দিলেন তাঁর সঙ্গে বাজপেয়ীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের নানা দিকের উপরে।
কিন্তু রাহুলের অনুপস্থিতিতে কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ বাজপেয়ীর উদাহরণ দিয়েই কৌশলে আক্রমণ শানালেন মোদীকে। মোদীর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হল, তিনি কারও পরামর্শ কানে তোলেন না। সেই সূত্র ধরে গুলাম নবি বললেন, ‘‘বাজপেয়ী নিজের রাজনৈতিক জীবনে সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। মৃত্যুর পরেও আজ সবাইকে তিনি এক করে দিলেন।’’ ঘটনাচক্রে আজ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সঙ্গে একাসনে যেমন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত ছিলেন, তেমনই ছিলেন কংগ্রেসের গুলাম নবি, সিপিআই-এর ডি রাজা, সিপিএমের জিতেন চৌধুরী বা পিডিপি-র মেহবুবা মুফতিরা।
বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের এখন যে শীতল সম্পর্ক, তাকে বাজপেয়ী জমানার প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করলেন গুলাম। তাঁর কথায়, ‘‘নরসিংহ রাওয়ের সরকারের সময়ে সংসদীয় মন্ত্রী হিসেবে আমি প্রতিদিন একাধিক বার প্রধান বিরোধী দলনেতা বাজপেয়ীর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতাম। একসঙ্গে চা থেকে খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত হত। আজ শাসক ও বিরোধীর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা সে সময়ে ছিল না।’’ বাজপেয়ীর জনপ্রিয়তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অটলজি কড়া কথা বললেও, প্রতিপক্ষের মিষ্টি লাগত। আর এখন এমন নেতা আছেন, যাদের ভাল কথাও গালির মতো মনে হয়।’’
সদ্য জোট ভেঙে যাওয়া পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতে, ‘‘কাশ্মীরের মানুষের কাছে দেবদূত ছিলেন বাজপেয়ী। তিনি প্রথম নেতা যিনি কাশ্মীরিদের ভরসা করেছিলেন, আর কাশ্মীরিরাও তাঁকে বিশ্বাস করেছিল।’’ এখানেও কার্যত মোদীর সঙ্গে বাজপেয়ীর তুলনাই সামনে এল। কফিনে শেষ পেরেক ঠুকলেন বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সহকর্মী শরদ যাদব। মোদীর উপস্থিতিতে শরদ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ‘বেদাগ’ হওয়া উচিত। যেমনটি ছিলেন বাজপেয়ী।’’