মেয়ে ‘অর্জুন’, বাবা কিন্তু অটো চালানো ছাড়েননি

তিনি আর পাঁচ জন অটোচালকের মতোই সামনে তিন জন না বসলে অটো ছাড়েন না। তিনি আর পাঁচ জন অটোচালকের মতোই খুচরো না দিলে যাত্রীদের সঙ্গে রাগারাগিও করেন। তবু তিনি অন্য অটোচালকদের থেকে আলাদা। কারণ, তাঁর মেয়ে এক সময় বিশ্বের এক নম্বর ছিলেন, এখন পাঁচে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ১৭:০৪
Share:

এই অটো চালিয়েই মেয়েকে অলিম্পিকে পৌঁছে দিয়েছেন শিবনারায়ণ। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি আর পাঁচ জন অটোচালকের মতোই সামনে তিন জন না বসলে অটো ছাড়েন না। তিনি আর পাঁচ জন অটোচালকের মতোই খুচরো না দিলে যাত্রীদের সঙ্গে রাগারাগিও করেন। তবু তিনি অন্য অটোচালকদের থেকে আলাদা। কারণ, তাঁর মেয়ে এক সময় বিশ্বের এক নম্বর ছিলেন, এখন পাঁচে। তাঁর মেয়ে এ বারে রিও অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁর মেয়ে দেশের এক নম্বর তিরন্দাজ, ‘অর্জুন’ দীপিকা কুমারী। আর তিনি দীপিকার বাবা, শিবনারায়ণ মাহাতো।

Advertisement

এগারো বছর বয়সে মেয়ের হাতে তির-ধনুক ধরিয়েছিলেন শিবনারায়ণ। এর পর কয়েক বছরের মধ্যে তির-ধনুক হাতে নিয়ে মেয়ের উত্থান রূপকথার মতোই। বাবার পেশাগত জীবনেও এসেছে বদল। আগে শিবনারায়ণ রাতু চাট্টি বাজারে ডালা নিয়ে সব্জি বিক্রি করতেন। এখন তিনি নিজের অটো চালান। মেয়ের দৌলতে রাতুতেই ঝুপড়ি বাড়ি থেকে দোতলা বাড়ি হয়েছে তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের জন্য পরিবারে যথেষ্ট সচ্ছলতা এসেছে। কিন্তু নিজের পেশাকে তো বন্ধ করে দিতে পারি না। সারাটা জীবন চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে কাটিয়েছি। এখনও ভয় হয়, কখন আবার আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয়। আমার মেয়ে তো আর ক্রিকেট খেলে না, তির-ধনুক চালায়!’’

তুলনা করতে চান না। তবু উঠে আসে রাঁচির আর এক বাসিন্দা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রসঙ্গ। শিবনারায়ণ বলেন, ‘‘ক্রিকেটের ব্যপারটা আলাদা। তাই ধোনির পরিবারের অনেক নিশ্চিত জীবন। ধোনির বাড়ির সামনে বিদেশি গাড়ির সারি। আমাদের তা নেই। মেয়ে এখন টাটাতে চাকরি করে ঠিকই কিন্তু মেয়ের উপর নির্ভর করে থাকবই বা কেন? ওর বিয়ে হয়ে যাবে। তখন কী হবে? তাই নিজের অটো নিজেই চালাই। খুব দরকার হলে চালক ভাড়া করি।’’ শিবনারায়ণ জানান, সরকার থেকে হরমুতে তাঁদের পরিবারকে জমি দিয়েছে। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রির জন্য কয়েক লক্ষ টাকা লাগবে। সেই টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খাওয়ার জোগাড় তাঁদের।

Advertisement

তবে এ সব নিয়ে খুব একটা ভাবতে চান না শিবনারায়ণ ও তাঁর স্ত্রী গীতা দেবী। ভেবে কী লাভ! তবু বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অভিমানটা বেরিয়ে আসা কখনও কখনও। ‘‘তিরন্দাজিতে পৃথিবীর ১২২টা দেশ অংশ নেয়। আর ক্রিকেট ক’টা দেশ খেলে বলুন তো?’’ বলেন শিবনারায়ণ। তাঁর কথায়, ‘‘২০১২ সালে বিশ্বের এক নম্বর তিরন্দাজ ছিল আমার মেয়ে। এখন পাঁচ নম্বর। ২০১০-এ দিল্লির কমনওয়েলথ গেমসে ২টো সোনা জিতেছে। আমেরিকা থেকে ইউথ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এসেছে। ২০০৬ সালে মেক্সিকোতে আর্চারি ওয়ার্ল্ড কাপে সোনা জিতেছে। আমার মেয়ের রেকর্ড কিন্তু ধোনির রেকর্ডকে ম্লান করে দিতে পারে।’’

ঘর ভর্তি মেডেল দেখিয়ে শিবনারায়ণ বলেন, ‘‘মেয়েকে প্রথম যখন এক প্রশিক্ষকের কাছে নিয়ে যাই তখন তিনি বলেছিলেন, এত রোগা! এর তো ধনুক তোলার শক্তি নেই।’’ প্রশিক্ষককে ভুল প্রমাণ করেছিলেন দীপিকা। শিবনারায়ণ বলেন, ‘‘অলিম্পিক যত এগিয়ে আসছে ততই শুধু আমার নয়, রুটের সব অটোচালক বন্ধুদেরও টেনশন বাড়ছে। আগের বার অলিম্পিকে মেডেল মিস করেছে মেয়ে। সবাই বলছে, এ বার ওকে পারতেই হবে।’’

মেয়ে মেডেল পেলে সবাইকে লাড্ডু খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়ে দিয়েছেন বাবা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন