অটোরিকশা ধর্মঘটে নাজেহাল হলেন শিলচরের সাধারণ মানুষ।
বহিরাগত অটোরিকশা শহরে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। শহর-সীমানাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে আজ ২৪ ঘণ্টার জন্য ‘চাকা বন্ধ’ করেন অটোরিকশার মালিক-চালকরা। শিলচর অটোমালিক সংস্থা এবং পিএমআরওয়াই অটোমালিক সংস্থা যৌথ ভাবে ওই ধর্মঘট ডাকে। শিলচর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৬ কিলোমিটার পরিধিতে অটো চলাচলের দাবি জানায় সংগঠনগুলি।
রংপুরের অটোমালিক-চালকরাও বনধে সামিল ছিলেন। তবে তাঁরা পৃথক ভাবে জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। জেলাশাসকের কাছে স্মারকপত্র দিয়ে তাঁদের অটোরিকশাগুলিকে অন্তত মেট্রো মল পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়ার আর্জি জানান।
চাকা বনধে শহর বা শহরতলিতে কোনও অটোরিকশা চলেনি। বন্ধ ছিল স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলিও। এতে ছাত্র-অভিভাবকরা বিপাকে পড়েন। মুশকিল হয় অফিসযাত্রীদেরও। মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে প্রশাসন এ দিনের জন্য রিকশার চলাচলে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করে। সুযোগ বুঝে তাঁরাও বেশি ভাড়া আদায় করেছেন। অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছন।
প্রথম পর্যায়ের আন্দোলন সফল হলেও শিলচর অটোমালিক সংস্থা এবং পিএমআরওয়াই অটোমালিক সংস্থা পরবর্তী আন্দোলন আপাতত স্থগিত বলে জানিয়ে দিয়েছে। চাকা বনধের পরও তাঁদের দাবি মানা না হলে ২১ সেপ্টেম্বর জেলাশাসকের অফিসের সামনে পেটে গামছা বেঁধে বিক্ষোভ দেখানোর কথা ছিল তাঁদের। শিলচর অটোমালিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ ভট্টাচার্য, ধীরাজ রায়, ইসলামউদ্দিন এবং পিএমআরওয়াই অটোমালিক সংস্থার কার্যবাহী সভাপতি প্রবীর সূত্রধর, হরিলাল দাস, পিনাক চৌধুরী জানান— অটোরিকশার মালিক-চালকরা বিশ্বকর্মা পুজো ও বিসর্জন নিয়ে কয়েক দিন ব্যস্ত থাকবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ইদুজ্জোহা। সে জন্য কেনাকেটায় বেরবেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। তাই আপাতত ২১ সেপ্টেম্বরের আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়েছে। ইদের পরই যে দুর্গোৎসবের কেনাকেটা শুরু হবে, সে বিষয়ও তাঁদের মাথায় রয়েছে।
বিকাশবাবুদের অভিযোগ, অটোরিকশার লাইসেন্সে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন জেলাপ্রশাসন জোর করে তাঁদের পাঁচ-সাত কিলোমিটারে আটকে দিচ্ছে। এতে অনেকের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। অটো-ঋণের কিস্তি দেওয়াও সম্ভব হবে না। ভোগান্তি বাড়বে সাধারণ মানুষের। সমান দুরত্বের জন্য তাঁদের দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হবে। লিঙ্ক রোডের বাসিন্দারা পুরসভার বাসিন্দা। কিন্তু সোনাই রোড ধরে তাঁদের
পক্ষে এক অটোরিকশায় শহরের কোথাও যাওয়া সম্ভব হবে না। ডিআইসির সামনে নেমে অন্য অটোরিকশা ধরতে হবে।
এত সব কথার পরও অটোরিকশার মালিক-চালকরা চাকা বনধের মধ্যেই ১৬ কিলোমিটার পরিধির দাবি থেকে সরে আসেন। বিকাশবাবুরা নতুন একটি শহর-সীমার প্রস্তাব দেন। তাতে বলা হয়েছে, শহরের অটোরিকশাগুলিকে মেডিক্যাল কলেজে না আটকে এনআইটি পর্যন্ত যেতে দেওয়া হোক। এই রুটে বাইরের অটো আসুক লিঙ্ক রোড পর্যন্ত। তারাপুর ইঅ্যান্ডডি-র সীমাকে এক দিকে বাস টার্মিনাস, অন্য দিকে মজুমদার বাজার পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা এবং বাইরের অটোরিকশাকে ইন্ডিয়া ক্লাব পর্যন্ত চলার অনুমতি দিতে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সোনাই রোডে ডিআইসি-তে না আটকে শহরের অটোগুলিকে নাগাটিলা পর্যন্ত এবং বাইরের অটোগুলিকে গোপাল আখড়ার মুখ পর্যন্ত যেতে দিতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। শিলচর অটোমালিক সংস্থা এবং পিএমআরওয়াই অটোমালিক সংস্থা জেলাশাসকের কাছে দ্রুত ট্রাফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ডের বৈঠক ডাকতেও অনুরোধ করেন। বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাই না। কিন্তু আমাদেরও তো খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে।’’
জেলাপ্রশাসন অবশ্য তাদের শহর-সীমা কঠোর ভাবে মেনে চলতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়ে দিয়েছে। পরিবহণ বিভাগ এবং ট্রাফিক পুলিশ গত কাল থেকেই শহর-সীমায় পিকেট বসিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখার জন্য চার জন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।