ভোটের রিংয়েও ‘দঙ্গল-কন্যা’র কাজে লাগছে বাবার ‘কোচিং’

ববিতা অবশ্য বিলক্ষণ জানেন, কুস্তির মতো রাজনীতির লড়াইয়েও প্যাঁচে সামান্য ভুল হলেই ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

দাদরি শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৯
Share:

সভার শেষে গ্রামে লাড্ডু বিলি ববিতার। —নিজস্ব চিত্র।

গাড়ির সিটের পিছনে বিজেপির এক গোছা উত্তরীয়ের মধ্যেই গোঁজা চিরুনি। ব্যাগের আধখোলা চেন থেকে মুখ বাড়ানো নরেন্দ্র মোদীর টাটকা জনসভার ছবিতে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই তিনি। এক হাতে এক মিনিটের জন্যও চুপ থাকতে না-জানা মোবাইল। অন্য হাতে জলের বোতল। কোলে আধ খাওয়া বিস্কুটের প্যাকেট। স্পিডের কাঁটা ১০০ পার করে দৌড়চ্ছে গাড়ি। আর ভোটে জেতার নতুন লক্ষ্যে দৌড়চ্ছেন ববিতা ফোগতও। ঠিক যে একাগ্রতায় কুস্তির মঞ্চে এত দিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাশায়ী করেছেন এই ‘দঙ্গল-কন্যা’।

Advertisement

হরিয়ানার যে দুই কুস্তিগির বোনের ‘সত্যি গল্প’ পর্দায় তুলে এনে আমির খানের ছবি ‘দঙ্গল’ (কুস্তি) সুপারহিট, ববিতা তাঁদেরই ছোটজন। হরিয়ানার অখ্যাত গ্রাম থেকে উঠে এসে তিন-তিনটি কমনওয়েলথ গেমসে (২০১০, ২০১৪, ২০১৮) মেডেল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১২) পদক। অর্জুন পুরস্কার। কুস্তির আখড়ায় কেরামতি দেখানোর পরে ত্রিশ ছুঁইছুঁই ববিতা এ বার ভোট-ময়দানে। অগস্টে বিজেপিতে যোগদানের পরে বিধানসভা নির্বাচনে দাদরির প্রার্থী। যাঁর সমর্থনে প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “সম্প্রতি ভারতে এসে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং বলেছেন, দঙ্গল দেখে মুগ্ধ তিনিও।”

ববিতা অবশ্য বিলক্ষণ জানেন, কুস্তির মতো রাজনীতির লড়াইয়েও প্যাঁচে সামান্য ভুল হলেই ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা। বিশেষত যেখানে আজ পর্যন্ত দাদরিতে ব্যালট-যুদ্ধে কখনও জেতেনি বিজেপি। রাজ্যের অন্য অনেক জায়গায় মুষড়ে থাকা কংগ্রেসের কর্মীরা এই তল্লাটে কিছুটা চাঙ্গা। হাত চিহ্নের পতাকা হাতে মিছিলের ফাঁকে অমিত কুমার, রাম দীপ, অমিত সাঙ্গোয়ানেরা বলছেন, “ববিতা কুস্তির মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এ বারের লড়াইয়ে তাঁর আশা নেই।” গত বার এই আসনে যারা বিজয়ী, পারিবারিক বিবাদে সেই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল ছত্রভঙ্গ। কিন্তু স্থানীয়েরা বলছেন, তা ভেঙে তৈরি হওয়া জননায়ক জনতা পার্টিও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাবে অর্জুনজয়ী কুস্তিগিরকে। এমনকি, বিজেপি শিবির ঠারেঠোরে মানছে, লড়াই কঠিন জেনেই প্রচারে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ববিতার হয়ে ভোটপ্রার্থী কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহও।

Advertisement

এই কঠিন টক্করে তাই প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখছেন না ববিতা। ‘দ্রোণাচার্য’ বাবা মহাবীর সিংহ ফোগতের কোচিংয়ে চিরকাল যা শিখে এসেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “ভোর সাড়ে চারটেয় দিন শুরু। জলখাবার খেয়ে সাড়ে ছ’টা-সাতটা থেকে লাগাতার প্রচার। পাড়ার মোড়ে ছোট জনসভা। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা। দুপুরের খাওয়া গাড়িতেই। বাড়ি ফিরতে রাত্রি ১১টা-১২টা। প্রতিদিন।”

দঙ্গল ছবিতে যতই ‘বাপু সেহত কে লিয়ে তু তো হানিকারক হ্যায়...’ গান থাকুক, ক্লিপ আর গার্ডারে টান করে চুল বাঁধা ববিতা বলছেন, বছরের পর বছর বাবার আখড়ায় কঠিন পরিশ্রমের জন্যই রাজনীতির ময়দানেও বেমানান লাগছে না নিজেকে। টান পড়ছে না পরিশ্রমের ইচ্ছে বা মনের জোরে। তাঁর দাবি, “মা আর কাকা দীর্ঘ দিন পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। রাজনীতি রক্তে। তার উপরে মোদীজির অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে পা রাখার এই সিদ্ধান্ত।” তাই কখনও প্রচারে বেরিয়ে পাড়ার পরিচিতকে বলছেন, “আশীর্বাদ করুন। কথা দিচ্ছি, হতাশ করব না। আর কাজ না-করলে কষে কান মলে দিতে ভুলবেন না।” কখনও পথসভার শেষে বিলি করছেন লাড্ডু। পরিচিত বয়স্কাকে জলের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বাচ্চার গলায় পরিয়ে দিচ্ছেন সমর্থকদের দেওয়া গাঁদার মালা। সব মিলিয়ে, রাজনীতির প্যাঁচেও তেমন আনাড়ি দেখাচ্ছে না ববিতাকে।

এ বার হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে ববিতা ছাড়াও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী যোগেশ্বর দত্তকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন হকি অধিনায়ক সন্দীপ সিংহেরও।

কিন্তু সম্ভবত সুপারহিট সিনেমার দৌলতেই প্রচারের আলো ববিতার উপরে বেশি। ‘বাপু’র আখড়ায় পাশের পরে এ বার তাঁর অগ্নিপরীক্ষা রাজনীতির ‘দঙ্গলে’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন