পিছলো বাবরি শুনানি, গুজরাত জুড়ে রাম রাজনীতি

সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমি নিয়ে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিব্বল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:০৩
Share:

শুরু হয়ে গেল রামের নামে মেরুকরণের রাজনীতি। গুজরাতের প্রথম দফার ভোটের মাত্র চার দিন আগে। প্রত্যাশিত ভাবেই।

Advertisement

আজ সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমি নিয়ে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিব্বল। মূলত তাঁর আপত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট সাত বছরের পুরনো মামলার শুনানি ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে।

সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের হয়ে সিব্বল সওয়াল করলেও তা হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছেন অমিত শাহ। রাহুল গাঁধীকে কাঠগড়ায় তুলে বিজেপি সভাপতির দাবি, ‘‘কংগ্রেসের হবু সভাপতি রাহুল গাঁধী রামমন্দির নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুন।’’ রাহুল ‘নরম হিন্দুত্ব’-র কৌশল নিয়ে গুজরাতের মন্দিরে মন্দিরে ঘুরছেন। নিজেকে শিবভক্ত বলে দাবি করছেন। তাঁকে ‘পৈতেধারী ব্রাহ্মণ’ হিসেবে তুলে ধরছে কংগ্রেস। তবে অমিতের অভিযোগ, ‘‘উনি মন্দিরে রাজনৈতিক সফর করছেন। আর সিব্বলকে দিয়ে রামমন্দির নিয়ে দ্রুত ফয়সালায় বাধা তৈরি করছেন।’’ কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালা পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি মন্থরার ভূমিকায়। কোর্টের রায় সবাই মানুক, সেটাই চায় কংগ্রেস।’’

Advertisement

বুধবার, ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৫ বছর পূর্তি। ঠিক আগের দিন বিতর্কিত জমির সাত বছরের পুরনো মামলার নিষ্পত্তির দিন ঠিক করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১০-এ ইলাহাবাদ হাইকোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি তিন ভাগ করে, দু’ভাগ রামলালা ও নির্মোহী আখাড়াকে এবং এক ভাগ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিলিয়ে দিতে বলে। সেই রায়কেই শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়।

অমিত শাহের মন্দির-রাজনীতির দিকে আঙুল তুলে সিব্বল দাবি করেন, ২০১৯-এর জুলাইয়ের পরে, আগামী লোকসভা ভোট পর্যন্ত শুনানি পিছনো হোক। রাজীব ধবন, দুষ্মন্ত দাভের মতো মুসলিম সংগঠনের আইনজীবীরাও সঙ্গে যোগ দেন। সিব্বলের অভিযোগ, বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর চাপেই এই শুনানি হচ্ছে। রামমন্দির বিজেপির ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি। মামলার প্রধান শরিকরা কেউ দ্রুত শুনানির দাবি তোলেনি। আদালতের বাইরে এই মামলার গুরুতর প্রভাব পড়বে। দাভে যুক্তি দেন, ‘‘সরকার চায়, আদালতে অযোধ্যার দ্রুত শুনানি হোক। আপনারা ফাঁদে পড়বেন না।’’

আরও পড়ুন: ফের মন্দির জিগির, ঘরপোড়া আমরা, ভোট এলেই তাই ডরাই

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ অবশ্য সিব্বলের দাবি খারিজ করেছে। সিব্বল যুক্তি দেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার সব নথি জমা দেয়নি। ১৯,৫৯৫টি নথি অনুবাদ করে দেওয়া হয়েছে। তা পড়ার জন্য সময় দরকার। বিরোধিতা করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা। শেষে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, ৮ ফেব্রুয়ারির আগে সব পক্ষের আইনজীবীরা বসে সমস্ত নথি জমা নিশ্চিত করবেন।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ঘোষণা করেছে, ২০১৮-র অক্টোবর থেকে রামমন্দির তৈরি হবে। সে দিকে ইঙ্গিত করে ধবন বলেন, ‘‘অক্টোবরের আগে শুনানি শেষ হতে পারে না।’’ রাম জন্মভূমি ন্যাসের আইনজীবী হরিশ সালভে যুক্তি দেন, এজলাসের বাইরে মামলার প্রভাব নিয়ে আদালত চিন্তা করলে ভুল বার্তা যাবে। অন্য মামলার মতোই এর শুনানি হওয়া উচিত। কিন্তু ধবন বলেন, ‘‘এটা নিছক জমি বিবাদ নয়। এ দেশে একটা মসজিদ ভেঙে দেওয়া যেতে পারে কি না, বিচারপতিরা তার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন