দৃশ্য-১: ‘জিস হিন্দু কা খুন না খওলা, খুন নহি উয়ো পানি হ্যায়’। উত্তাল স্লোগান উঠছে অযোধ্যার বিসর্পিল রাস্তাঘাট থেকে। গলি থেকে রাজপথ তখন হাজার হাজার করসেবকের দখলে। তারিখটা ৫ ডিসেম্বর, ১৯৯২। বিকেল হয়েছে সবে। রাত পোহালেই বিতর্কিত ভূখণ্ডে করসেবা অভিযান শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযানের আগের দিন নেতৃত্বের উপরেই ক্ষিপ্ত লক্ষ লক্ষ করসেবক।
দৃশ্য-২: সকাল ১০টা ৩০। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২। রামকথা কুঞ্জের মঞ্চে পৌঁছলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর যোশী, অশোক সিংঘলরা। ২০০ গজ দূরে তৈরি হয়েছে প্রতীকী করসেবার জায়গাটা। আডবাণীদের উদ্দেশ্য নাকি ছিল হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে করসেবকদের বিরত রাখা। কিন্তু নেতাদের ভাষণের অপেক্ষাতেই ছিলেন না কেউ। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশের কর্ডন ভেঙে বিতর্কিত ভূখণ্ডের দিকে এগোতে শুরু করলেন করসেবকরা।
দৃশ্য-৩: বেলা ১১টা ৫৫। করসেবকদের ইটবৃষ্টির মুখে পিছু হঠেছে পুলিশ। কোথাও কর্ডন ভেঙে, কোথাও বেড়া ডিঙিয়ে বাবরি মসজিদ চত্বরে ঢুকে পড়েছেন বহু করসেবক। অনেকে উঠে পড়েছেন মসজিদের গম্বুজের মাথায়। আরএসএস সাধারণ সম্পাদক এইচ ভি শেষাদ্রি, কট্টর হিন্দুত্বের পোস্টারবয় লালকৃষ্ণ আডবাণী, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অশোক সিংঘল রামকথা কুঞ্জ থেকেই মাইকে শান্ত হতে বলছেন করসেবকদের। কিন্তু উন্মত্ত ভিড়ের তুমুল উল্লাসে মাইকের আওয়াজও চাপা পড়ে যাচ্ছে।
দৃশ্য-৪: দুপুর ১২টা ৩০। বাবরি মসজিদের তিনটি গম্বুজই ঢেকে গিয়েছে করসেবকদের জমায়েতের নীচে। শাবল, গাঁইতি, লোহার রড নিয়ে হামলা শুরু হয়েছে। কারও আবেদনে কাজ হচ্ছে না দেখে উমা ভারতীকে সক্রিয় হতে বললেন আডবাণী। উমার আবেদনও অগ্রাহ্য হল। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ প্রথম গম্বুজটা ধসে গেল।
দৃশ্য-৫: দুপুর ৩টে। সাধ্বী ঋতম্ভরা এমন ভঙ্গি শুরু করলেন, যেন তাঁর ভর হয়েছে। অবিরাম নাচতে-গাইতে লাগলেন তিনি। গান নয়, স্লোগান— ‘এক ধাক্কা অউর দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো’। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ল দ্বিতীয় গম্বুজ।
দৃশ্য-৬: বিকেল ৫টা। বাবরি মসজিদের তৃতীয় গম্বুজও ভেঙে পড়ল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতারা বিজয় মিছিল বার করলেন অযোধ্যায়। এতক্ষণ অবশ্য এই সংগঠনের নেতারাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন যে তাঁরা করসেবকদের হিংসাত্মক হওয়া থেকে আটকাতে চাইছেন।
দৃশ্য-৭: শুধু বিতর্কিত মসজিদ ভেঙেই থামল না জমায়েত, অযোধ্যার মুসলিম মহল্লায় বেশ কিছু বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হল। পরবর্তী কয়েক দিনে ভারতের নানা প্রান্তে দাউদাউ করে উঠল সাম্প্রদায়িক হিংসা।