Babri Masjid Demolition Case

নিশানায় ‘তোতা’ সিবিআই

২৮ বছরের তদন্তের পরেও সিবিআইয়ের দিকে সেই ব্যর্থতার অভিযোগই উঠল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:১৪
Share:

ছবি সংগৃহীত।

আঙুল উঠল সেই ‘খাঁচার তোতাপাখি’র দিকেই।

Advertisement

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় ৩২ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়ে আজ লখনউয়ের বিশেষ আদালত কার্যত সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল। বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদবের মতে, সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা, বাবরি-কাণ্ডের প্রধান তদন্তকারী অফিসার মসজিদ ভাঙার পিছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র প্রমাণে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণই হাজির করতে পারেননি।

২৮ বছরের তদন্তের পরেও সিবিআইয়ের দিকে সেই ব্যর্থতার অভিযোগই উঠল। দেশের সর্বোচ্চ আদালতই এক সময় সিবিআই-কে সরকারের ‘খাঁচার তোতা’র তকমা দিয়েছিল। বুধবার রায়ের পর বিরোধী শিবির বলছে, সিবিআই যে সত্যিই খাঁচার তোতা, ফের প্রমাণ হল।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মতে, সিবিআইয়ের এই তদন্ত নিয়েই আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে। কংগ্রেস নেতা তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “এ যেন ‘নো ওয়ান কিলড এক্স’! মসজিদ কারা ভেঙেছিল, এই প্রশ্নের সঙ্গে কারা দোষীদের ছাড় দিয়ে দিল, সে প্রশ্নেরও জবাব নেই।”

বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় দাঁড়িয়ে করসেবকদের পরিচালনা করেছিলেন। তাঁদের উত্তেজিত করতে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বাবরি মসজিদ ভাঙার পরেই রামজন্মভূমি থানার সাব-ইনস্পেক্টর গঙ্গাপ্রসাদ তিওয়ারি এফআইআর করে বলেছিলেন, মঞ্চে হাজির বিজেপি, গেরুয়া শিবিরের নেতারা ‘এক ধাক্কা অউর দো’ বলে স্লোগান তুলেছেন। খোদ আডবাণীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার অঞ্জু গুপ্ত সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, মসজিদ ভেঙে যাওয়ার পরে কী ভাবে আনন্দ করেছিলেন নেতারা! কিন্তু বিচারক যাদব তাঁর রায়ে বলেছেন, সিবিআই অফিসার আদালতের সামনে স্বীকার করেছেন যে তিনি এমন এক জন ব্যক্তিকেও খুঁজে পাননি যিনি বলবেন যে অভিযুক্ত নেতারা তাঁকে উস্কানি দিয়েছিলেন!

সিবিআই মূলত রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও হিন্দু সংগঠনগুলির ৪৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল। কিন্তু যারা শাবল-গাঁইতি নিয়ে মসজিদ ভেঙেছিল, তাদের অভিযুক্ত করা হয়নি। মসজিদ ভাঙার সময় ৪২৫ জন আহত হয়েছিলেন বলে সিবিআই স্বীকার করেছে। কিন্তু তাদের কাউকেই অভিযুক্ত করা হয়নি। বিচারক যাদব বলেছেন, ‘‘তাদের বক্তব্য নথিবদ্ধ করাও তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব ছিল। তা থেকে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য মিলতে পারত। কিন্তু সিবিআইয়ের নজরে মূলত রাজনৈতিক দল ও হিন্দু সংগঠনের নেতানেত্রীরাই ছিলেন।’’ বিচারকের মতে, ‘‘মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি থেকেই প্রমাণ হয় না যে তাঁরা হিংসা ছড়িয়ে পড়বে বলে জানতেন।’’

শুধু সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব নয়। ২৮ বছর ধরে সিবিআই তদন্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধি মেনে হয়নি বলেও আজ আদালতের রায়ে স্পষ্ট হয়েছে। সিবিআই ওই দিনের ঘটনার অনেক ভিডিয়ো ফুটেজ, ভিডিয়ো ক্যাসেট সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আদালতে পেশ করেছিল। কিন্তু নিয়ম মেনে তাতে কোনও সিলমোহর ছিল না। নিরপেক্ষ সাক্ষীর সই ছিল না। বিচারক রায়ে বলেছেন, ‘‘সিবিআইয়ের হাজির করা কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ বা ক্যাসেট সিল-বন্দি অবস্থায় ছিল না। সে সব ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হয়নি। তদন্তকারী অফিসার স্বীকার করেছেন, তদন্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধি মেনে হয়নি।’’

এই মামলায় সিবিআই প্রমাণ হিসেবে ওই দিনের ঘটনার বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্ট জমা করেছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা নারায়ণন নিজেই স্বীকার করেন, তাঁরা ওই রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেননি। সংবাদপত্রের রিপোর্টের টাইপ করা কপি সাংবাদিকের নাম ও প্রকাশের তারিখ ছাড়াই আদালতে পেশ হয়েছে। আদালত তা সাক্ষ্য হিসেবে মানতে চায়নি। জেনে-বুঝেই কি সিবিআই এই ভাবে ফাঁকফোকর রেখে দিয়েছে? প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

রায় নিয়ে সিবিআই কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। মামলায় সিবিআইয়ের আইনজীবী ললিত সিংহ বলেন, “সিবিআই সদর দফতরে রায় পাঠানো হবে। সেখানে আইন দফতর রায় খতিয়ে দেখে এর বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন