Jammu and Kashmir Terror Attack

নিহত ছয় জঙ্গির সূত্র ধরেই কি পহেলগাঁও কাণ্ডের মূল মাথার হদিস? দুই ‘এনকাউন্টার’ বদলে দিতে পারে তদন্তের গতিপ্রকৃতি

তিন দিন। দু’টি ‘এনকাউন্টার’। নিহত ছয় জঙ্গি। জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ান এবং পুলওয়ামায় নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি অভিযানে গতি পেতে পারে পহেলগাঁও কাণ্ডের তদন্ত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ১৮:৪২
Share:

জম্মু-কাশ্মীরে তল্লাশি অভিযানে নিরাপত্তাবাহিনী। —ফাইল ছবি।

তিন দিন। দু’টি ‘এনকাউন্টার’। নিহত ছয় জঙ্গি। জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ান এবং পুলওয়ামায় নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি অভিযানে গতি পেতে পারে পহেলগাঁও কাণ্ডের তদন্ত। নিহত ওই জঙ্গিদের সূত্র ধরেই মিলতে পারে মূল মাথারও হদিস। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় তিন জঙ্গির। এর পর বৃহস্পতিবার সকালেও গোপন সূত্র মারফত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুলওয়ামায় তিন জঙ্গিকে নিকেশ করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, তল্লাশি অভিযানে কিছু মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে পহেলগাঁও কাণ্ডের হামলাকারীদের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা উদ্ধার হওয়া সেই সব মোবাইল ফোন থেকে জানা গেলেও যেতে পারে। মোবাইলগুলিকে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইজিপি ভিকে বিরদি বলেন, ‘‘নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে পহেলগাঁও কাণ্ডের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর স্থানীয় জঙ্গিদের তালিকা তৈরি করে তাদের অনেকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা এবং প্রশাসন। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। গত মঙ্গলবারেই শোপিয়ানে তিন জঙ্গির উপস্থিতির খবর পায় সেনা এবং পুলিশ। তার পরই অভিযানে যায় তারা। দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই চলে। সেনা সূত্রে জানানো হয়, ওই অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারা হল, শাহিদ কুট্টে, আদনান শফি দার, এহসান আহমেদ শেখ।

Advertisement

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই তিন জনই লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গে যুক্ত। ঘটনাচক্রে, পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল ‘দ্য রেজ়িস্টেন্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। এই ‘টিআরএফ’ লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন বলেই পরিচিত। অন্য দিকে, পুলওয়ামা জেলার ত্রালে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে যে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে, তারা জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত। তারাও যে পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, সেই সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

পহেলগাঁও কাণ্ডের তদন্ত করছেন এনআইএ। তথ্যপ্রমাণ জোগাড় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তদন্তকারীদের নিজস্ব সূত্রে এনআইএ জানতে পেরেছে, বৈসরন উপত্যকায় হত্যালীলায় অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে সাতজন জঙ্গির যোগ ছিল। তাদের চিহ্নিতও করেছে এনআইএ। ঘটনার পর যে সব জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে পুলওয়ামার বাসিন্দা আসিফ শেখ ও অনন্তনাগের বাসিন্দা আদিল ঠোকারের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, তদন্তকারীরা আদিলদের খোঁজ পেয়েছিলেন জঙ্গি জুনায়েদ ভাটের মোবাইল ফোন থেকে। সোনমার্গ সুড়ঙ্গে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আগেই জুনায়েদকে নিকেশ করেছিল নিরাপত্তাবাহিনী। সেই একই ভাবেই পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িত বাকি জঙ্গিদেরও খোঁজ মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

পহেলগাঁও হামলার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে জঙ্গিদের আস্তানা ক্ষেপণাস্ত্র হানায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই এনআইএ-র তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, ৫০ বছর বয়সি শেখ সাজ্জাদ গুল পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের মূল মাথা। টিআরএফ-এর এক শীর্ষ পদে সে-ই বসে রয়েছে। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির বাসিন্দা শেখ সাজ্জাদ গুল, নাম ভাঁড়িয়ে সাজ্জাদ আহমেদ শেখ নামেও পরিচিত। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তার। ২০২০ ও ২০২৪ সালে মধ্য ও দক্ষিণ কাশ্মীরে রক্ত বইয়েছে সে। এ ছাড়াও ২০২৩ সালে মধ্য কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলা কিংবা অনন্তনাগে পুলিশকর্মী হত্যা— একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে গিয়েছে শেখ সাজ্জাদ গুল। এনআইএ তার মাথার দাম ঘোষণা করেছে ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার মূল চক্রী এখন কোথায়— সেই খবর তদন্তকারীদের কাছে নেই।

গোয়েন্দাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ঘটনার এত দিন পরেও জঙ্গিরা যে ভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট, ওই এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে সাহায্য পাচ্ছে জঙ্গিরা। আপাতত সেই স্থানীয় সাহায্যকারীদের চিহ্নিত করাই সবচেয়ে বড় লক্ষ্য গোয়েন্দাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement