তিস্তা নিয়ে মমতার ওপর আস্থা রাখছে ঢাকা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা সফর সেরে আসার পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাইছে বাংলাদেশ। তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের অন্য নেতাদের আলোচনার পরে ঢাকার বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তির পথে অন্তরায় নন।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা সফর সেরে আসার পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাইছে বাংলাদেশ। তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের অন্য নেতাদের আলোচনার পরে ঢাকার বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তির পথে অন্তরায় নন।

Advertisement

শনিবার বাংলাদেশের বিদেশসচিব মহম্মদ শহিদুল হক এখানে বলেন, “ঢাকায় গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন। আমরা তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছি।” বিদেশসচিব বলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তাঁরা এখন অনেক বেশি আশাবাদী।

কিন্তু তার জন্য কত দিন সময় লাগবে? হক সাহেব বলেছেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করতে পারেন। আমরা সেই সফরের জন্য অপেক্ষা করছি।” তা হলে কি মোদীর বাংলাদেশ সফরে এ বিষয়ে কোনও ঘোষণার আশা করছে ঢাকা? পড়শি দেশের বিদেশসচিবের জবাব, “দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে বৈঠকে বসলে কিছু না কিছু ফল তো মেলেই।” তার পরেই অবশ্য তিনি যোগ করেছেন, তিস্তার আগে তো স্থলসীমান্ত চুক্তিটি রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে নতুন বোঝাপড়া গড়ে উঠছে। তা নিয়েও কোনও উল্লেখযোগ্য ঘোষণা হতে পারে।

Advertisement

ভারত ও ভারত মহাসাগর শীর্ষক এক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে বড়সড় প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের বিদেশসচিব শহিদুল হক। এই সম্মেলনে ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করেরও আসার কথা ছিল। সম্মেলনের পাশাপাশি দু’দেশের বিদেশসচিবের আরও এক বার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু দিল্লিতে ব্যস্ততার কারণে জয়শঙ্কর ভুবনেশ্বরে আসতে পারেননি। ফলে সেই বৈঠকটি হচ্ছে না।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনও দিনই একটি বিষয় নিয়ে আটকে থাকেনি। আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শক্তি সংক্রান্ত উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহি চৌধুরি দিল্লি এসে বিদ্যুৎ রফতানি সংক্রান্ত আলোচনা করবেন। এ ছাড়া সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় দু’দেশ এক সঙ্গে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে রাজি হয়েছে। শিলং-গুয়াহাটি-ঢাকা এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে নতুন বাস নিয়েও কথা শুরু হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর।

এত দিন ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তি প্রতি তিন বছর অন্তর করা হত। একটি দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক চুক্তির জন্য নয়াদিল্লি বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে। ঢাকা এখন তাতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের বিদেশসচিব বলেন, “ভারতের দীর্ঘদিনের দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। তিন বছরের বদলে ১০ বছরের বাণিজ্যিক চুক্তি হচ্ছে। এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও বাড়বে।”

বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ বলছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তির অগ্রগতির কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ২০১৩ থেকেই বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাচ্ছে ভারত থেকে। সম্প্রতি আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার ঘোষণা করেছে নয়াদিল্লি। ভবিষ্যতে ত্রিপুরার পালটানা থেকেও বিদ্যুৎ যাবে বাংলাদেশে। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা মাথায় রেখে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করাটা জরুরি বলে মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। ঢাকায় মমতার সফরসঙ্গী এক আমলার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এখনও মনে করেন, তিস্তার আরও বেশি জল বাংলাদেশকে দিলে উত্তরবঙ্গে তার রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে। তা মোকাবিলার জন্য তিনি কেন্দ্রের কাছে মোটা টাকার ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ চেয়েছেন।” ওই আমলা মনে করেন, কেন্দ্র স্পষ্ট আশ্বাস না দিলে মমতাও হয়তো তিস্তা নিয়ে চুড়ান্ত ছাড়পত্র দেবেন না।

বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকরা মমতার এই মনোভাবের কথা বিলক্ষণ জানেন। এখানে এক কূটনীতিক বলেন, “বরফ গলতে শুরু করেছে এটাই আশার কথা। স্থলসীমা চুক্তিটি নিয়ে সব পক্ষই এখন রাজি। সেটা করা হলে তার পর তিস্তার দিকে তাকানো হবে। বাংলাদেশকেও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।”

প্রায়ই একই সুর শোনা গিয়েছে বাংলাদেশের বিদেশসচিবের কথাতেও। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে বুঝেছেন, তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের পক্ষে কতটা প্রয়োজনীয়। ১৭ বছর পর তাঁর ঢাকা সফর অত্যন্ত ইতিবাচক।” মমতা এ বিষয়ে যে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে দু’দেশ কাজ শুরু করেছে বলেও বিদেশসচিব জানান।

বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে বাস চালুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মমতা ঢাকা থেকে ফেরার পরই এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে ঢাকা। বাংলাদেশের বিদেশসচিব জানান, নয়াদিল্লিরও এ বিষয়ে আপত্তি নেই।

মমতার সফরের পর তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে যখন আশার সঞ্চার হয়েছে, তখন খাগড়াগড় কিংবা সারদার টাকা বাংলাদেশে খাটানোর মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে চর্চায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বাংলাদেশের বিদেশসচিব। খাগড়াগড় প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য সন্ত্রাস মোকাবিলায় দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির সমন্বয় খুব ভালো। তাঁর কথায়, জঙ্গিদের কোনও দেশ হয় না। ফলে তারা কোথা থেকে এসে কোথায় হামলা চালাাচ্ছে, তার চেয়েও বড় কথা সন্ত্রাস মোকাবিলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। যা ঢাকা এবং নয়াদিল্লি করছে বলে মনে করেন বিদেশসচিব হক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন