অবরোধ, বিক্ষোভেও শান্তিতে বরাক বন্‌ধ

বরাক বনধ কাটল শান্তিতেই। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। অবরোধের জন্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বিধায়ক দিলীপকুমার পাল-সহ শ’দুয়েক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সবাই জামিনে মুক্তি পান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

বন্‌ধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। হাইলাকান্দিতে। সোমবার অমিত দাসের তোলা ছবি।

বরাক বনধ কাটল শান্তিতেই। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। অবরোধের জন্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বিধায়ক দিলীপকুমার পাল-সহ শ’দুয়েক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সবাই জামিনে মুক্তি পান।

Advertisement

কাছাড়ের পুলিশ সুপারের বদলি চেয়ে আজ বিজেপি ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছিল। শক্তি প্রদর্শনে তাঁরা যথেষ্ট লোকবল রাস্তায় নামাবে বলে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু অন্যান্য বনধের চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। যাঁরা বনধ বিরোধিতায় সক্রিয় থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন, তাঁরাও নিজেদের এলাকার বাইরে বেরোননি। পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ নিজে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন বলে তাঁর বাহিনী আজ কোনও প্ররোচনায় পা না দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই ময়দানে ছিল। ধস্তাধস্তির মধ্যেও কেউ মেজাজ হারাননি। বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পালের অভিযোগ, সকালে পুলিশ কিছু কিছু এলাকায় বনধ বিরোধিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। অবরোধকারীদের রাস্তায় উঠতে দেয়নি। বাস টার্মিনাসে অবরোধে সামিল ৭ দলীয় কর্মীকে আটক করা হয়। মেহেরপুর, শিবালিক পার্ক, ঘনিয়ালায় ব্যবসায়ীদের ডেকে দোকান খুলতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কেউ সাড়া না দেওয়ায় সে রাস্তা ছেড়ে দেয় পুলিশ। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘অহেতুক বিধায়ককে গ্রেফতার ও অশালীন আচরণ বরাকবাসী মেনে নিতে পারেননি। আজকের বনধে তা স্পষ্ট।’’ দু’চারটি জায়গা বাদ দিলে কাছাড়ের সর্বত্র বনধে সাড়া মেলে। দোকানপাট খোলেনি। চলেনি গাড়ি-রিকশা। সরকারি, আধা সরকারি কর্মীরা অফিসমুখো হননি। বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ, ব্যাঙ্ক, আদালত। তবে বিজেপির ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল পরে জেলাশাসকের অফিসে গিয়ে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। ওই প্রতিনিধিদলে কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, দিলীপকুমার পাল ছাড়াও ছিলেন জেলা বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাই, প্রদেশ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় ও মুখপাত্র অবধেশ সিংহ।


বন্‌ধে সুনসান করিমগঞ্জের রাস্তা। সোমবার শীর্ষেন্দু সী-র তোলা ছবি।

Advertisement

জেলাশাসকের অফিস থেকে মিছিল করে তাঁরা পুলিশ সুপারের অফিসের দিকে রওনা দিলে পুলিশ মিছিলে অংশগ্রহণকারী সবাইকে গ্রেফতার করে। ভারপ্রাপ্ত ওসি স্বপনকুমার দে’র নেতৃত্বে পুলিশ গাঁধীভবনের সামনে সবাইকে আটকে দেয়। পথে দু’চারবার আটকাতে গিয়ে ধস্তাধস্তির দরুন ব্যর্থ হয় পুলিশ। তবে পরিস্থিতি যেন বিগড়ে না যায়, সে ব্যাপারে নিরাপত্তাকর্মীরা সতর্ক ছিলেন। আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন থাকলেও ধস্তাধস্তির সময় তাঁরা দূরেই ছিল।

খাদ্য সুরক্ষা আইন চালুর দাবিতে কংগ্রেসেরও আজ মিছিল করে। জেলাশাসকের অফিসের সামনে তাঁদের বিক্ষোভ দেখানোর কথা ছিল। বরাকের অন্য দুই জেলায় বনধের মধ্যে এই কর্মসূচি করা হলেও কাছাড়ে তা স্থগিত রাখে কংগ্রেস। শিলচর শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি শৈবাল দত্ত জানান, ১৪৪ ধারায় ৫ জনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ হওয়ায় কাছাড়ে এ দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়নি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরই পরবর্তী তারিখ জানানো হবে। শৈবালবাবুর দাবি, অনেক জায়গায় আজ বনধে সাড়া দেয়নি মানুষ। চমক দিতে চেয়ে গেরুয়া বাহিনী ক্রমেই সাধারণ জনতার কাছ থেকে সরে পড়ছে। এ দিকে, শহর বিজেপির সভাপতি দীপায়ন চক্রবর্তী এ দিন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। শনিবার বিধায়ক ও জেলা সভাপতি-সহ ৫ জনকে গ্রেফতারের পর তিনি থানায় খবর নিতে গেলে তাঁকেও আটক করা হয়। দীপায়নের অভিযোগ, পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ তাঁকে বেদম পিটিয়েছেন। তাঁর চশমা ভেঙে দিয়েছেন। থানা থেকেই তাঁকে পরে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর আজ তাঁকে ছাড়া হয়। দীপায়ন পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অহেতুক শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগে এজাহার দিয়েছেন। পুলিশ পাল্টা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে থানা ভাঙচুরের অভিযোগ এনেছে। আগামী কাল তাঁকে এই মামলায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশি লাঠিচার্জে জখম পুর-সদস্য রাখি চৌধুরী এখনও মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। তাঁর মাথায় চোট লেগেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন