পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গ’ করার প্রস্তাবে বহির্বঙ্গের বাংলাভাষী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায়ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির সহ-সভাপতি দীপক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘যদিও পূর্ববঙ্গ বলে কোনও ভূখণ্ডের বাস্তব অবস্থান বর্তমানে নেই, তবু বৃহত্তর বাঙালি জাতিসত্তার প্রয়োজনেই ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটা থাকাই উচিত।’’ তিনি মনে করেন, বার্লিন প্রাচীর ভেঙে যদি বৃহত্তর জার্মান জাতি এক হতে পারে তবে বাঙালি জাতিরও কাঁটাতার ভেঙে এক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীপকবাবু আশা করেন, হাজার বছরের নির্মিত বাঙালি জাতিসত্তা কোনও এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এক হবে। তখন রাষ্ট্রের সীমা ভাঙতে সময় লাগবে না। নামবদল হয়ে বঙ্গ হলে আত্মিক বিচ্ছেদ ঘটবে এবং ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ সফল হবে। তাতে সাম্রাজ্যবাদের বিভাজনের নীতিকে সিলমোহর দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কবি-সাহিত্যিক অমিতাভ দেবচৌধুরীর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ একটা ভৌগোলিক নাম। এখন যে কথা বলা হচ্ছে, পূর্ববঙ্গ না থাকায় পশ্চিমবঙ্গ নামটা কেন থাকবে? কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গ না হয়ে বঙ্গ হলে তখন তো একটাই বাংলা হচ্ছে। ফলে বঙ্গে না থেকেও আমরা যারা বঙ্গেরই অংশ, আমাদের যে একটা ভৌগোলিক পরিচিতি রয়েছে, তখন তা আর অবশিষ্ট থাকবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই আমরা অস্তিত্বের সঙ্কটে। তখন তাহলে আমাদের প্রবাসী বাঙালি বলা হবে।’’ বাঙালি যেভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, বাংলাও তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখন আবার নাম বদলের কী প্রয়োজন পড়ল, প্রশ্ন তাঁর।
তবে কোন রাজ্য কী নামে নিজের পরিচিতি চায়, বাইরে থেকে তাতে প্রতিক্রিয়া অর্থহীন বলে মনে করেন গুরুচরণ কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অমলেন্দু ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, অসমের বাঙালিদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ যে কথা, বঙ্গ একই কথা। পশ্চিমবঙ্গ নাম রয়েছে বলে কি আর অসমের বাঙালিরা কম সঙ্কটে, প্রশ্ন তাঁর। অন্যদিকে, বঙ্গ নামের পক্ষপাতী আইনজীবী ইমাদুদ্দিন বুলবুল, শিলচর সরকারি বালক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ তুষারকান্তি নাথ। বুলবুল বলেন, পূর্ববঙ্গ বলে যেহেতু কিছু নেই, পশ্চিমবঙ্গ নামেরও তাই যুক্তি নেই। এর চেয়ে বঙ্গ বা বঙ্গপ্রদেশ যথার্থ হবে। তুষারবাবু মনে করেন, বঙ্গ বা বাঙ্গালপ্রদেশ ঐতিহাসিক দিক থেকে প্রাচীনত্বকেই নির্দেশ করবে। ফলে নামবদলটাই ঠিক হবে।