শহিদ দিবসে মাতল বরাক

বরাকের মাতৃভাষাকে সম্মান জানাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিধানসভা চত্বরে দাঁড়ালেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। সঙ্গে ছিলেন কাছাড়ের লক্ষীপুরের বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ ও শিলচর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

বরাকের মাতৃভাষাকে সম্মান জানাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিধানসভা চত্বরে দাঁড়ালেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। সঙ্গে ছিলেন কাছাড়ের লক্ষীপুরের বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা। আজকের আন্দোলনের সঙ্গে ১৯৬০ দশকের মিল খুঁজে পেলেন বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্মেলনের কর্তারা।

Advertisement

১৯৮৬ সালের ২১শে জুলাই করিমগঞ্জে ভাষা বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন জগন্ময় দেব এবং দিব্যেন্দু দাস। তাঁদের স্মৃতিতেই ওই দিনটি ভাষাশহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয় গোটা বরাকে।

ভাষাশহিদ দিবসে এ দিন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এবং লক্ষীপুরের বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা অসম বিধানসভার বাইরে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ভাষাশহিদদের আত্মবলিদান দিবসকে ‘রাজ্য শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানান। বিধানসভার অধ্যক্ষের মাধ্যমে অসম সরকারের কাছে স্মারকপত্র পাঠানো করা হয়। স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয়— বরাকের ভাষা বাংলা। তাই সেখানে সরকারি বিজ্ঞাপন, প্রচারপত্রও যেন বাংলা ভাষাতেই লেখা হয়। বরাকের সব সরকারি কার্যালয়েও যেন বাংলা ভাষাই ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্মেলনের প্রাক্তন সম্পাদক সব্যসাচী রায় বলেন, ‘‘বিধায়কদ্বয়ের আজকের আন্দোলন অনেকটা ষাটের দশকের আন্দোলনের মতোই।’’ তিনি জানান, ভাষা বিলের বিরুদ্ধে ১৯৬০ সালে অসম বিধানসভায় বরাকের ৮ বিধায়ক গর্জে উঠেছিলেন। করিমগঞ্জের বিধায়ক রণেন্দ্রমোহন দাসের নেতৃত্ত্বে বরাকের ৮ বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছিলেন। বরাকে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময় জনগণকেও রাস্তায় নামতে হয়েছিল। ১৯৬১ সালে বরাকে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে ১৯ মে কাছাড় জেলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১১ জন। ভাষা সার্কুলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন করিমগঞ্জের ২ বীর সেনানী। যার সুবাদে বরাকের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি লাভ করেছিল। সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, কিন্তু তারপরও অসমের উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির একাংশের চাপে বরাকে ভাষা আগ্রাসন এখনও অব্যাহত রয়েছে। এখনওও বরাকে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে প্রচারপত্র, পুস্তিকা অসমিয়া ভাষায় বিলি করা হয়।

এ দিন করিমগঞ্জের বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে ভাষাশহিদ দিবস পালন করা হয়। করিমগঞ্জের শম্ভুসাগর পার্কে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠনের তরফ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয়। ভাষা আগ্রাসন সহ এনআরসি নবীকরণ নিয়ে বিভিন্ন বক্তা আলোচনা করেন। তাঁরা বলেন— এনআরসি নবীকরণের মাধ্যমে বঙ্গভাষীদের বিদেশি সাজানোর চক্রান্ত চলছে। এ ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে সরব হতে হবে। রথীন্দ্র ভট্টাচার্য, জন্মজিৎ রায়, মাশুক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

শিলচরেও ভাষাশহিদ দিবস পালন করে বরাক বঙ্গ ও সংস্কৃতি সম্মেলন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ এবং এআইডিএসও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন