National News

কোনও পরিষেবা নেই, কুসংস্কারে পরিত্যক্ত ম্যালেরিয়াপ্রবণ গ্রাম

কাঁপুনি জ্বরে ভুগছিল প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামটি। এর মধ্যেই পর পর দু’জনের মৃত্যু পারাহিয়া জনজাতির মানুষগুলিকে আতঙ্কের শেষ সীমায় নিয়ে যায়। গ্রামবাসীদের কুসংস্কার,অন্ধ-বিশ্বাস— সারা গ্রামেই ‘ডাইনির নজর’ পড়েছে! শেষ পর্যন্ত গ্রামকেই ত্যাজ্য করে বাসিন্দারা চলে গিয়েছেন অন্যত্র। আর এতেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:০৮
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

কাঁপুনি জ্বরে ভুগছিল প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামটি। এর মধ্যেই পর পর দু’জনের মৃত্যু পারাহিয়া জনজাতির মানুষগুলিকে আতঙ্কের শেষ সীমায় নিয়ে যায়। গ্রামবাসীদের কুসংস্কার,অন্ধ-বিশ্বাস— সারা গ্রামেই ‘ডাইনির নজর’ পড়েছে! শেষ পর্যন্ত গ্রামকেই ত্যাজ্য করে বাসিন্দারা চলে গিয়েছেন অন্যত্র। আর এতেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

লাতেহারের পরিত্যক্ত খিরাখণ্ড টোলা এখন লোকমুখে ‘ভূতুড়ে গ্রাম’। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাড়িয়েছে যে, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা কাঁপুনি-জ্বরের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও গ্রামছাড়া বাসিন্দাদের গ্রামে ফেরাতে পারছেন না। আদিবাসী-উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই চালানো বাসবী কিরোর কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ডের বেশির ভাগ আদিবাসী গ্রামই ম্যালেরিয়া প্রবণ। পাশাপাশি রয়েছে অপুষ্টি।’’ তাঁর মতে, ম্যালেরিয়া ও অপুষ্টির ‘ভূত’ তাড়াতে সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক না হয় তা হলে এ ভাবে হয়তো গ্রামের পর গ্রাম পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।

খিরাখণ্ড আসলে একেবারেই প্রত্যন্ত। লাতেহারের হেরহাঞ্জ থেকে এই গ্রামে যেতে সময় লাগে প্রায় দু’ঘন্টা। হেরহাঞ্জ থেকে কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরে আর রাস্তা নেই। সামনে নদী। নদী পেরোতে হয় পায়ে হেঁটে। নদী পেরিয়ে পাহাড়ি সুঁড়িপথে হেঁটেই পৌঁছতে হয় গ্রামে। মোটরবাইক দূরের কথা, সাইকেলে অগম্য খিরাখণ্ড। কার্যত অগম্য এই গ্রামে ৭০ জন আদিম জনজাতির বাস। বা বলা ভাল, বাস ছিল।

Advertisement

জেলা প্রশাসন কী জানত এই গ্রামের কথা? অভিযোগ, প্রত্যন্ত ওই গ্রামে কোনও পরিষেবাই পৌঁছয়নি এত দিন। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসে ঢাকা গ্রামটির গায়ে ভূতুড়ে গ্রামের তকমা লাগার পরই সেটি লাতেহার জেলা প্রশাসনের গোচরে এল। প্রশাসনের তরফে গ্রামছাড়াদের বোঝানো হচ্ছে। তবে গ্রামবাসীরা অনড়। তাঁরা আশপাশের গ্রামে তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহকুমা শাসক কমলেশ্বর নারায়ণ বলেন, ‘‘আমরা ওই গ্রামের মুখিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁর কথাতেই সবাই গ্রাম ছেড়েছেন। কিন্তু বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মুখিয়া কোনও ভাবেই গ্রামে ফিরতে রাজি হচ্ছেন না।’’ তিনি জানান, প্রশাসন ওই গ্রামের আশপাশে ক্যাম্প করে কুসংস্কারবিরোধী প্রচার চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যশিবির করে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা ও তার চিকিৎসা চলছে। মহকুমাশাসকের কথায়, ‘‘দেখা যাক গ্রামবাসীরা মত বদলানো যায় কি না।’’

রঘুবর সরকার ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে উন্নয়ন পৌঁছনোর কাজ শুরু হয়েছে বলে যতই দাবি করুক না গ্রাম-পরিত্যক্ত হওয়ার এই ঘটনা সেই দাবিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হেরহাঞ্জের এক প্রাথমিক শিক্ষকের কথায়, ‘‘গ্রামে একটা টিউবওয়েল পর্যন্ত নেই! গ্রামবাসীরা গ্রাম বয়কট করে ছিক করেছেন। প্রশাসন এত দিন কোথায় ছিল?’’

আরও পড়ুন

গোটা গ্রাম দৌড়েও স্ত্রী-র সত্কারের জন্য এক পয়সা মিলল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন