BBC

মিলেছে অসঙ্গতির তথ্য! বিবিসির দফতরে ৬০ ঘণ্টা ধরে ‘সমীক্ষা’ চালানোর পরে বলল আয়কর দফতর

আয়কর দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে বিবিসির বিভিন্ন ইউনিট দ্বারা প্রকাশিত আয় এবং মুনাফার সঙ্গে ওই সংবাদ সংস্থার ‘ভারতে ব্যবসায়িক কার্যকলাপের মাত্রা’ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫৮
Share:

বিবিসির দফতরে কর ফাঁকির তথ্য মেলার দাবি আয়কর দফতরের। ফাইল চিত্র।

ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-এর দিল্লি এবং মুম্বইয়ের বিবিসির দফতরে দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টা ধরে ‘সমীক্ষা’র ব্যাখ্যা দিল আয়কর দফতর। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির তরফে শুক্রবার বিকেলে দাবি করা হয়েছে, ম্যারাথন ‘সমীক্ষা’য় ব্রিটেনের সংবাদ সংস্থাটির কর দেওয়ার নথিপত্রে বেশ কিছু গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।

Advertisement

আয়কর দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতে বিবিসির বিভিন্ন ইউনিট দ্বারা প্রকাশিত আয় এবং মুনাফার সঙ্গে ওই সংবাদ সংস্থার ‘ভারতে ব্যবসায়িক কার্যকলাপের মাত্রা’ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’’ দফতরের দাবি, বিবিসির কর্মীদের একাংশের বিবৃতি, ডিজিটাল ফাইল এবং নথি পরীক্ষার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। সেই পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ‘বিবিসি কর্তৃপক্ষ আয় প্রকাশ করেননি’ এবং ‘কর এড়িয়ে গিয়েছেন’।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নাগাদ বিবিসি-এর দিল্লি এবং মুম্বইয়ের বিবিসির দফতরে আয়কর দফতরের ‘সমীক্ষা’ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিবিসি দফতর ছাড়েন আয়কর ‘সমীক্ষক’রা। তার পরই বিবিসির তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, আগের মতোই ভয় না পেয়ে, নিরপেক্ষ ভাবে খবর করে যাবে তারা। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড’ (‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস’ বা সিবিডিটি)-র তরফে শুক্রবার বিবিসির দফতরে হানায় কর সংক্রান্ত অনিয়ম চিহ্নিত করার দাবি জানানো হয়েছে।

Advertisement

কেন এত দীর্ঘ সময় ধরে ‘সমীক্ষা’ পর্ব চলল, তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি আয়কর দফতর। তবে সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নথি পরীক্ষার পাশাপাশি আয়কর আধিকারিকেরা সংস্থার কম্পিউটার ও ল্যাপটপে ‘শেল কোম্পানি’, ‘ফান্ড ট্রান্সফার’, ‘ফরেন ট্রান্সফার’-এর মতো শব্দগুলি খুঁজেছেন। পাশাপাশি, বিবিসির আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত বিভিন্ন বৈদ্যুতিন এবং কাগুজে নথির প্রতিলিপি করা হয়েছে। ফলে দেরি হয়েছে প্রক্রিয়ায়।

এমন পরিস্থিতি হতে পারে আঁচ করে বুধবার সকালেই কর্মীদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বলে ই-মেল পাঠিয়েছিলেন বিবিসি কর্তৃপক্ষ। বিবিসির ভারতীয় কর্মীদের আয়কর আধিকারিকেরা যে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তাতে পূর্ণ সহযোগিতার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে সংবাদ সংস্থার কর্মীদের সংস্থার মনোবিদের পরামর্শ নিতেও বলা হয়। তার আগেই মঙ্গলবার সংস্থার সন্ধ্যাকালীন বিভাগের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিল বিবিসি। এর পর বুধবার দুপুর থেকে সংস্থার দুই শাখার শীর্ষ কর্তা ছাড়া বাকিদের বাড়ি থেকেই কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঘটনাচক্রে, মোদীর তথ্যচিত্র নিয়ে বিতর্কের আবহেই বিবিসির দফতরে আয়কর হানার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’-এর প্রদর্শন বন্ধের জন্য ‘তৎপরতা’ শুরু করেছিল মোদী সরকার। দু’দশক আগে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গোধরা-কাণ্ড এবং তার পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে এক ঘণ্টার ওই তথ্যচিত্রে। ‘দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় সরকার। একে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে তথ্যচিত্রটি তৈরি।

যদিও বিবিসি দাবি করে, যথেষ্ট গবেষণা করে তথ্যচিত্রটি তৈরি। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারির শেষে কেন্দ্রের তরফে ইউটিউব এবং টুইটারকে বিবিসি-র তথ্যচিত্রের লিঙ্ক সমাজমাধ্যম থেকে তুলে নিতে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পাশাপাশি, আইটি রুলস ২০২১-এর জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে একাধিক টুইট তুলে নেওয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা তখন থেকেই বিষয়টি ‘সেন্সরশিপ’ আখ্যা দিয়ে আসছেন। মঙ্গলবার বিবিসির দফতরে আয়কর হানার শুরুর পরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন