ঝাড়খণ্ডের টেটে লম্বা লাইন বাঙালিদের

পরীক্ষা ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ নেই। বেতনও বেশি। তাই এ বার বাংলা ছেড়ে ঝাড়খণ্ডমুখী এ রাজ্যের হবু শিক্ষক-শিক্ষিকারা। লম্বা লাইন কর্মরত শিক্ষকদেরও।কাজের খোঁজে এক সময়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশের দেহাতে রেওয়াজই ছিল পূবে যাওয়ার।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও আর্যভট্ট খান

কলকাতা ও রাঁচী শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি

পরীক্ষা ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ নেই। বেতনও বেশি। তাই এ বার বাংলা ছেড়ে ঝাড়খণ্ডমুখী এ রাজ্যের হবু শিক্ষক-শিক্ষিকারা। লম্বা লাইন কর্মরত শিক্ষকদেরও।

Advertisement

কাজের খোঁজে এক সময়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশের দেহাতে রেওয়াজই ছিল পূবে যাওয়ার। মুখে মুখে ঘুরত গানের কলি, ‘চল সাঁইয়া পূরব কি ঔর...’। ঠিকানা ছিল ‘কলকাত্তা’। সেই বাংলাই এখন দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তরমুখী। চাকরি নিয়ে ছেলেমেয়েরা ক’বছর ধরে ছুটছে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, মুম্বই, দিল্লি। এ বার সেই তালিকায় ঢুকল ঝাড়খণ্ডও। কোনও কায়িক শ্রমের কাজে নয়, স্কুলে শিক্ষকতা করতে হাজার হাজার বাঙালি প়ড়ুয়া বা কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভিড় বাড়ছে রাঁচীগামী ট্রেনগুলিতে। ঝাড়খণ্ডের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেটে দেখা গিয়েছে সেই ‘রিভার্স মাইগ্রেশন’-এরই একটি ঝলক।

টেট নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ল্যাজেগোবরে অবস্থা। কখনও ঘোষিত পরীক্ষা পিছোচ্ছে, কখনও আদালতের আদেশে স্থগিত হচ্ছে ফল প্রকাশ। এক অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি, ২০ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট হয়েছে। ঝাড়খণ্ড অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অরবিন্দ প্রসাদ সিংহের কথায়, ‘‘জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে বেরোবে টেটের ফল।’’ তাঁর কথায়, সার্বিক প্রক্রিয়া খুব স্বচ্ছ। কোথাও বিতর্ক হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘এ বার পড়শি রাজ্য, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বহু ছেলেমেয়েও ঝাড়খণ্ডের টেটে বসেছে।’’

Advertisement

২০ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের রাঁচী-সহ ৯টি জেলায় ৩৩৫ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা দেন ২ লক্ষ ৫৩ হাজার জন। অরবিন্দবাবু জানান, এদের মধ্যে কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বীরভূম, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া থেকেই দলে দলে পরীক্ষার্থী এসেছেন। অরবিন্দবাবুর মতে, ‘‘এ যেন ঠিক উল্টোস্রোত বইছে। ক’বছর আগেও ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর পরীক্ষার্থী পশ্চিমবঙ্গে যেতেন।’’ তবে উল্টো-স্রোতের তত্ত্ব মানতে একেবারেই নারাজ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা যুক্তি, ‘‘সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিতেও তো কত ছেলে যায়! তাতে কী হল?’’ তাঁর ধারণা, ঝাড়খণ্ডের পরীক্ষা নিশ্চয় সহজ। তাই বোধহয় অনেকে দৌড়চ্ছে। পার্থবাবুর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের পরীক্ষা নিয়ে আগ্রহ না থাকলে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া এখানে পরীক্ষায় বসছে কেন?’’

উল্টোস্রোত যে বইছে তা পরীক্ষার দিন রাঁচী স্টেশনে নেমেই বুঝতে পারেন বীরভূমের পুরন্দরপুরের অম্লান বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্ধুদের সঙ্গে তিনি রাঁচীতে পরীক্ষা দিতে যান। অম্লানবাবুর কথায়, ‘‘রাঁচী স্টেশনে নেমে মনে হল যে পশ্চিমবঙ্গেরই কোনও স্টেশনে নামলাম। পরীক্ষার হলে বসে দেখি, ডাইনে-বাঁয়ে বেশিরভাগই বাঙালি ছেলেমেয়ে।’’

অম্লানের এক বন্ধু সম্রাট বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের টেটের পদ্ধতিও খুব স্বচ্ছ। আমরা ‘অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন’ বা ‘ওএমআর’ উত্তরপত্রে উত্তর লিখলাম। ওই উত্তরপত্রে যা লিখলাম তার একটা কার্বনকপি আমাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ সম্রাট জানান, সম্প্রতি ওয়েবসাইটে মডেল উত্তরপত্র প্রকাশ করেছে ঝাড়খণ্ড অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। তিনি এখন দুটো উত্তর পত্র মিলিয়ে দেখছেন। আন্দাজ পাচ্ছেন নিজের ভুল-ত্রুটির। কাউন্সিল প্রধান জানান, মিলিয়ে দেখতে গিয়ে কোথাও খটকা লাগলে তা রিভিউও করাতে পারবেন পরীক্ষার্থী।

অম্লানবাবুরা ফলের অপেক্ষায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তবু তিনি কেন ঝাড়খণ্ডে টেট দিলেন? অম্লানবাবুর উত্তর, ‘‘ওদের বেতন কাঠামো অনেক ভাল। পরীক্ষা ব্যবস্থাও স্বচ্ছ। বীরভূম লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের কোনও স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পেলে কর্মস্থলও তো বাড়ি থেকে খুব বেশি দূর হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন