লাদাখ আলাদা, এক রাজ্য ভেঙে কেন্দ্রশাসিত দুই

আজ সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের পাশাপাশি ওই রাজ্যের পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিলটি আনে বিজেপি।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

বিশেষ মর্যাদা শুধু নয়, রাজ্যের মর্যাদাটুকুও হারাল জম্মু ও কাশ্মীর। কাশ্মীরের জন্য থাকা সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ লোপ ও জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্গঠন বিল আনার ফলে ভারতের মানচিত্রে বাড়তে চলেছে দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। কেন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারাল, শাসক শিবির তা আজ স্পষ্ট না করলেও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের কথা মাথায় রেখেই জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পেতে পারে জম্মু ও কাশ্মীর।

Advertisement

আজ সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের পাশাপাশি ওই রাজ্যের পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিলটি আনে বিজেপি। বিলে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ দমন ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অমিত শাহ বলেন— লাদাখ এত দিন জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে থাকলেও, সেখানকার ভূপ্রকৃতি ও জনসংখ্যার চরিত্র আলাদা। সেখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত এলাকা ঘোষণার।

অন্য দিকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদের কথা মাথায় রেখে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত এলাকা করা হচ্ছে। অন্য কেন্দ্রশাসিত এলাকার মতোই এ ক্ষেত্রে রাজ্যের মাথায় থাকবেন উপরাজ্যপাল। সংবিধানের ৩৬০ অনুচ্ছেদে আর্থিক সঙ্কট ঘোষণা করার অধিকার থাকবে কেন্দ্রের হাতে। দিল্লির মতো জম্মু ও কাশ্মীরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও চলে আসবে কেন্দ্রের হাতে। আজ দিনভর বিতর্কের শেষে বিলটি পাশ হয় রাজ্যসভায়। তার পরে তা পেশ হয় লোকসভাতেও। শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বিলটি সেখানে পাশ হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা।

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

এ দিকে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ায় জম্মু ও কাশ্মীরে জমি-বাড়ি কিনতে পারবেন গোটা দেশের মানুষ। ফলে আগামী দিনে জনসংখ্যার চরিত্রগত পরিবর্তন হতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন গুলাম নবি আজাদের মতো কাশ্মীরি নেতা। ক্ষমতা দখলে এটা বিজেপির কৌশল বলে অভিযোগ তাঁদের। এক সময়ে সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তির সময়েও এ ভাবে নেপালিরা গিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে। পাল্টে যায় জনবিন্যাস। তিব্বতে ওই একই ভাবে আগ্রাসনের অভিযোগ রয়েছে চিন সরকারের বিরুদ্ধে। সে সময়ে তিব্বতে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে হান চিনাদের সেখানে গিয়ে বসবাস করার জন্য সরকার উদ্যোগী হয়েছিল। গুলাম নবিদের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি জানিয়েছে, এতে মূল ভারতের সঙ্গে মিশতে পারবে কাশ্মীর, গত সত্তর বছরে যা হয়নি। কমবে সন্ত্রাসবাদ। অমিত শাহের কথায়, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য স্বাধীনতার সময় বা তার আগে থেকে ওই রাজ্যে বসবাস করা পঞ্জাবি, ডোগরা বা গোর্খারা জমি-বাড়ি কিনতে পারতেন না। এ বার সেই সমস্যা দূর হবে।’’ আজকের পদক্ষেপের ফলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি-পুদুচেরির মতোই বিধানসভা নির্বাচন হবে জম্মু ও কাশ্মীরে। অন্য দিকে দমন ও দিউ বা চণ্ডীগড়ের মতো লাদাখে বিধানসভা থাকবে না। জনসংখ্যার তারতম্যের কারণে ওই পার্থক্য বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার মেয়াদ ছয় বছর থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে পাঁচ বছরে। তবে এখনই বিধানসভার সদস্য কমছে না। জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার বর্তমানে বিধায়ক সংখ্যা ১১১, যার মধ্যে ৪ জন লাদাখের। সেই চার জনকে বাদ দিয়ে ১০৭ সংখ্যার জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা গঠন করা হবে। আপাতত বিধায়ক সংখ্যা এক থাকলেও, ভবিষ্যতে জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গঠনে আসন পুনর্বিন্যাসের পথে হাঁটার পক্ষপাতী শাসক শিবির। যাতে আসন পুনর্বিন্যাসে জম্মু এলাকায় বিধানসভা আসন সংখ্যা বাড়ে। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র শ্রীনগর থেকে সরে আসে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন