বিহারে জয়ের কারিগর সত্তার সেই রাজনীতিই

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এক বার নয়, পরপর তিনটি জনসভায় সংরক্ষণ নিয়ে বলেছিলেন, সরকারের উচিত এ নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা। যে কমিটি সংরক্ষণ পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে নতুন ভাবে মূল্যায়ন করবে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ২০:০৫
Share:

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এক বার নয়, পরপর তিনটি জনসভায় সংরক্ষণ নিয়ে বলেছিলেন, সরকারের উচিত এ নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা। যে কমিটি সংরক্ষণ পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে নতুন ভাবে মূল্যায়ন করবে। ভাগবতের ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভোটের সময় একটা তুলকালাম কাণ্ড হয়েছিল। বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় আজ বলেছেন, ‘‘সঙ্ঘপ্রধান যে কোনও ভুল বলেছিলেন তা নয়। কিন্তু ওই সময়ে ওই মন্তব্যের অপব্যবহার করেছিল প্রতিপক্ষ। এই অপপ্রচারে কিছু ক্ষতি নিশ্চয় হয়েছে। তবে শুধু সেই কারণেই ভোটের ফল আশানরূপ হয়নি এমন নয়।’’

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ মহল ভোটের আগে বারংবার বলছিলেন, মণ্ডল কমিশনের ভূত মুক্ত করতে হবে ভারতীয় রাজনীতিকে। নতুন প্রজন্ম চাকরি চাইছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাইছে। জাতপাতের ভিত্তিতে ভোটদানের সাবেক সংস্কৃতিকে এ বার তাড়াতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। জনসভাগুলিতে নরেন্দ্র মোদী প্রশ্নও তুলেছিলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় বিহার কেন পিছিয়ে?

কিন্তু বাস্তবে কী দেখা গেল?

Advertisement

বিহার তথা ভারতের রাজনীতি এখনও সত্তা-পরিচিতির রাজনীতি থেকে মুক্ত নয়। বরং এই সত্তার রাজনীতি ভোটের সময় এক নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠেছে। এমনকী, যাদব ভোট ভাঙার জন্য লালুপ্রসাদের শ্যালক সাধু যাদবকে দিয়ে কাঁটা তোলার রাজনীতি করতে চেয়েছিল বিজেপি। সে কাজেও সফল হয়নি বিজেপি। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এই আঞ্চলিক সত্তার প্রশ্নেও এক জন মসিহার উপর নির্ভরশীল প্রান্তিক মানুষ। আর তাই মায়াবতীর ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে অন্য কোনও দলিত নেতাকে হাজির করালেও, মানুষ কিন্তু এখনও সেই আনকোরা নেতাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়।

অভিযোগ ছিল যে লালুপ্রসাদ যাদব জাতপাতের ক্ষেত্রে অপরাধীকরণও করেছেন। যাদব লেঠেলবাহিনী কী ভাবে বিহারে দৌরাত্ম্য চালায় সেটাও কারও অজানা নয়। সর্বভারতীয় শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের তত্ত্ব যা হিন্দু জাতীয়তাবাদের শক্তিকে পরিচালিত করে। কিন্তু সেই তত্ত্ব বা প্রচেষ্টা ভারতের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে তা ভেঙে বৃহৎ রাষ্ট্রের ভাবনায় মিলিয়ে দিতে পারেনি। অনেকে মনে করছেন, ভারতের মতো একটি বৃহৎ বহুত্ববাদী দেশে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, অনেক বেশি বহুমুখী। এটা ঠিক যে গ্রেট ব্রিটেনের জনসমাজের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার চরিত্রের সঙ্গে ভারতের চরিত্র মেলে না। কারণ ভারতের সত্তা বহু খণ্ডিত। তাই এই খেলায় নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব যতই স্টিম রোলার চালান না কেন, বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন ভারতের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা এত সোজা নয়।

আরএসএস চায় বিভক্ত হিন্দু পরিবারের মধ্যে মিলন ঘটুক। ব্রাহ্মণরাও হিন্দু, যাদব বা ওবিসি-রাও হিন্দু। কিন্তু গ্রামে গ্রামে ব্রাহ্মণ-যাদবকুল বা ওবিসি হিন্দুদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব রয়েছে। রয়েছে শ্রেণিসংঘাত। তাই চাইলেও কেবলমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু সমাজকে এক করা সম্ভব হচ্ছে না। যার সুযোগ নিচ্ছেন নীতীশ-লালুপ্রসাদরা। হারতে হচ্ছে বিজেপিকে।

আর সেই কারণেই আসল জয়ের কারিগর হল সেই সত্তার রাজনীতিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন