মেরামেড়ি লটারির কুপন। — শীর্ষেন্দু সী
আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে লটারির পাঁঠা, মুরগিও ভরসা!
করিমগঞ্জ শহরের অলিগলিতে মকর সংক্রান্তির জন্য চালু হয়েছে বিশেষ লটারি। কুপনের দাম ২০-২৫ টাকা। পুরস্কার চোখ-ধাঁধানো। কী নেই সেই তালিকায়— গরম মশলা, আলু-পেঁয়াজ, নারকেল থেকে শুরু করে মাছ, মুরগি, জোড়া পাঁঠাও। সাধারণ ভাবে লটারির জন্য বিক্রয়কর দিতে হলেও, বিহু বা মকর সংক্রান্তির লটারিতে সে সবের বালাই নেই। শহরজুড়ে তাই ছড়িয়েছে আজব সেই লটারির পোস্টার।
অসমের অন্যতম উৎসব বিহু। বরাকেও মাঘ মাসের প্রথম দিন মকর সংক্রান্তি পালন করা হয়। করিমগঞ্জের বড়গুল, আলেকারগুল এলাকায় অসমীয়দের বসতি রয়েছে। করিমগঞ্জের অসমীয়দের বক্তব্য— তারা সেখানে কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন। বড়গুল, আলেকারগুল এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অসমের অন্য জায়গার অসমীয়দের চেয়েও তাঁরা করিমগঞ্জে অনেক আগে এসেছেন। করিমগঞ্জের সে সব গ্রামে বিহু উৎসব ঘটা করে পালন করা হয়। অসমীয়রা বাঁশ, খড় দিয়ে তৈরি করেন ঘর। সেই ঘরকে অসমিয়া ভাষায় ‘ভেলা ঘর’ বলা হয়। বরাকের বাঙালিরাও মকর সংক্রান্তির আগের দিন বাঁশ-খড় দিয়ে ঘর তৈরি করেন। সেই ঘরের বাইরে রান্নাবান্না করে পিকনিক করেন। পর দিন সেই ঘর জ্বালানো হয়। বরাকের বাঙালিরা সেই ঘরকে ‘মেরামেড়ি’ বলেন।
সে দিন রাতে যে সব খাবার মেড়ামেড়ি ঘরের সামনে তৈরি করা হয়, তার খরচ সাধারণত সবাই ভাগাভাগি করে দিয়ে থাকেন। এখন জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। ভাল খাবার ইচ্ছে থাকলেও, টাকার অভাবে অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হয় না। সে দিকে তাকিয়েই রমরমা বেড়েছে মেড়ামেড়ি লটারির।
করিমগঞ্জ শহরের শিববাড়ি রোড, নীলমণি রোড, চরবাজার, বিপিন পাল রোড এলাকায় লটারি বিক্রি হচ্ছে রমরমিয়ে। লটারির পুরস্কারও আনকোরা। কোথাও প্রথম পুরস্কার হিসেবে মিলবে জোড়া পাঁঠা। দ্বিতীয় পুরস্কার কাতলা মাছ। তৃতীয় দেশি মোরগ। মিলছে ডিম, দুধ, সর্ষের তেল, জিরা, মরিচও। তা ছাড়া রয়েছে মাখন, পাউরুটি, আদা, কাঁচালঙ্কা, রসুন, গরম মশলা। স্বান্তনা পুরস্কারে কেউ দিচ্ছে নারকেল। কেউ বা চিনি।
আয়োজকরা বলছেন, চড়ুইভাতির দিনই মিলবে লটারির পুরস্কার। তাই সে দিন যাঁরা জিতবেন তাঁদের আনন্দ বাড়বে কয়েক গুণ।