প্রেমদিবসকে ব্যঙ্গ করে ‘বিয়ে’ দিল ভারতীয় হিন্দু সেনা। বুধবার চেন্নাইয়ে। ছবি: এএফপি।
চোখারাঙানি আর শাসানি ছিল আগে থেকেই! তা সত্যিও হল। দেশের নানা প্রান্তে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে দাপিয়ে বেড়াল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল-সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন। কোথাও তারা মারমুখী, কোথাও দিয়েছে হুমকি। ধাওয়াও করেছে তরুণ-তরুণীদের। এমনকী, প্রেমদিবস পালনকে বিদ্রুপ করে কুকুর-গাধার বিয়েও দিয়েছে এক হিন্দু সংগঠন! ভালবাসার বার্তা শুধু নয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আজ দিনভর ছড়িয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতির স্বঘোষিত রক্ষকদের এই তাণ্ডব।
একটি ভিডিওয় যেমন দেখা গিয়েছে, অমদাবাদে সাবরমতী নদীর তীরে গেরুয়া পতাকা ও লাঠি নিয়ে বজরং দলের লোকজন প্রেমিক-যুগলদের হুমকি দিচ্ছে। যাঁরা পালাচ্ছিলেন, তাঁদের ধাওয়াও করছে। পরে ওই দলের ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাড়ানো হয় পুলিশ পাহারা। উত্তর গুজরাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচার সচিব হেমেন্দ্র ত্রিবেদী জানান, হামলা হয়নি। প্রেমিক-প্রেমিকাদের ওই জায়গা ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী— অন্যান্য বছরের মতো এ বারও ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে থেকেই এই প্রচারে নেমেছিল বজরং দল। নাগপুরে তারা ঘোষণা করে, এ দিন রাস্তায় যুগলকে দেখা গেলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র উদ্যাপন রুখতে এ দিন শহরে মিছিলও বার করে তারা। একই ছবি হায়দরাবাদেও। সেখানে পানশালা ও রেস্তরাঁয় বিশেষ অনুষ্ঠান না করার ফতোয়া দিয়েছে বজরং। কোয়ম্বত্তূরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে একটি হিন্দু সংগঠন। এমনই একটি সংগঠন হুমকি দিয়েছিল ভুবনেশ্বরে কলিঙ্গ শপিং মল ও পার্কে অভিযান চালাবে। তাদের ৩০ সদস্যকে আজ আটক করে পুলিশ।
‘পশ্চিমি সংস্কৃতির দূষণের’ সবচেয়ে অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী রইল চেন্নাই-বেঙ্গালুরু। চেন্নাইয়ে আজ কুকুরের সঙ্গে গাধার বিয়ে দিয়েছে এক হিন্দু সংগঠন। আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র ‘সমর্থনে’ বেঙ্গালুরুতে দু’টি ভেড়ার বিয়ে দিয়েছে কর্নাটক রক্ষণা বেদিকে নামে এক সংগঠন। তাদের বক্তব্য, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র বিরোধিতা করা উচিত নয়। কারণ ভালবাসা জাত-ধর্ম মানে না। এই ভালবাসার জন্য এক দিনের ছুটিও ঘোষণা করা উচিত।’’
আরও পড়ুন: গ্রামের মানুষ দিল্লিতে এনে প্রচারে মোদী
বিক্ষোভ-বিদ্রুপের এই আবহে রইল অন্য ছবিও। ওডিশার জগতপুরের মেয়ে প্রোমোদিনীর উপরে অ্যাসিড হামলা হয়েছিল ২০০৯-এ। পুড়ে যায় শরীরের ৮০ শতাংশ। খোয়ান দৃষ্টিশক্তি। পাঁচ বছর হাসপাতালে থাকার সময়েই আলাপ মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ সরোজ সাহুর সঙ্গে। তিনিই প্রোমোদিনীর পাশে থেকেছেন ও অনেকটাই সারিয়ে তুলেছেন তাঁকে। আজ বাগ্দান সারলেন তাঁরা। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে। আবার শিবরাত্রিতেও বটে।
আর ঘটনাটি ঘটল, হিন্দুত্বের অন্যতম মুখ যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে। খাস লখনউয়ে।