যুদ্ধজয়ের অনু‌ষ্ঠানে চাপে গেরুয়া শিবির

১৮১৮-র ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের সেই ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধ দলিতদের কাছে ছিল ব্রাহ্মণ পেশোয়াদের জাতপাত, ছোঁয়াছুঁয়ির বিরুদ্ধে লড়াই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

পেশোয়াদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশরা যুদ্ধে নামিয়েছিল দলিতদের।

Advertisement

১৮১৮-র ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের সেই ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধ দলিতদের কাছে ছিল ব্রাহ্মণ পেশোয়াদের জাতপাত, ছোঁয়াছুঁয়ির বিরুদ্ধে লড়াই। তাই সংখ্যায় কম হলেও পেশোয়া বাহিনীকে সে দিন হারিয়ে দিয়েছিল দলিত মহার-দের নিয়ে গড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনী।

ঠিক ২০০ বছর পরে সেই ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধকে সামনে রেখেই দলিত নেতানেত্রীরা ফের এক মঞ্চে। রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা, গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী, ভীমরাও অম্বেডকরের নাতি প্রকাশ, জেএনইউ-এর ছাত্রনেতা উমর খলিদ, ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী নেত্রী সোনি সোরিরা ৩১ ডিসেম্বর পুণে যাবেন। ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তাঁরা।

Advertisement

এই অনুষ্ঠানকে ঘিরেই রক্তচাপ বেড়েছে বিজেপি-আরএসএসের। কারণ এখন দলিতদের ক্ষোভ ইতিহাসের পেশোয়াদের বিরুদ্ধে নয়। দলিত নেতাদের নিশানায় এখন ‘নতুন পেশোয়া’— বিজেপি, আরএসএস ও হিন্দু সংগঠনগুলি। মোদী জমানায় এমনিতেই দলিত নিগ্রহ বহুগুণ বেড়েছে বলে অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে দলিত-আন্দোলনেরই মুখ হলেন রোহিত ভেমুলা, জিগ্নেশ মেবাণীরা। তার উপরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বিজেপির ব্রাহ্মণ নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীশ। তা নিয়ে সে রাজ্যের সিংহভাগ মরাঠা বেশ ক্ষুব্ধ। এঁরা আবার জাতে ক্ষত্রিয়। এর মধ্যেই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বিরুদ্ধে দলিতরা একজোট হওয়ায় চাপে পড়েছে বিজেপি-সঙ্ঘ নেতৃত্ব।

নরেন্দ্র মোদী জমানায় দলিতদের উপর নির্যাতনের প্রথম বড় অভিযোগ ওঠে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের চাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করেছেন, এই অভিযোগে তোলপাড় হয় গোটা দেশ। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘ভীমা কোরেগাঁও শৌর্যদিন প্রেরণা অভিযান কমিটি’র সদস্যরা জানান, রোহিতের মা রাধিকা ৩১ ডিসেম্বর পুণেয় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলন হবে শনিবার ওয়াড়া-য়। ইতিহাসের পেশোয়াদের সদর দফতর ছিল সেখানেই। সম্মেলনের প্রচারপত্রে দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিজেপি-আরএসএসের মতো ‘নতুন পেশোয়া’দের হারানোর ডাকও দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিপদ আঁচ করলেও বিজেপি নেতারা সরাসরি এই অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি তুলছেন না। কারণ কোনও রাজনৈতিক পতাকার নীচে সম্মেলন হচ্ছে না। তবে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ মহাসঙ্ঘ প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছে, অনুষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করা হোক। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে পুণে নগর হিন্দুসভা-র দাবি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত দল বা সরকারকে ‘নতুন পেশোয়া’ বলা অসাংবিধানিক। পেশোয়াদের বংশধর উদয়সিংহ পেশোয়াও এই অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক শম্ভাজি ব্রিগেডের নেতা সন্তোষ শিন্ডে বলেন, ‘‘আপত্তি উঠেছে ঠিকই। কিন্তু গণতান্ত্রিক রীতিতেই অনুষ্ঠান হবে।’’

গুজরাতের উনায় দলিতদের নিগ্রহের প্রতিবাদেই রাজনীতি শুরু জিগ্নেশের। তিনিই সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ। নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি অম্বেডকরকে ‘আইকন’ করতে চাইলেও গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব রেখেই চলছেন তাঁর নাতি প্রকাশ। এঁদের উপস্থিতিই ভাবাচ্ছে সঙ্ঘ-বিজেপিকে। পরবর্তী একাধিক ভোটে এই দলিত বিক্ষোভ কতটা ছাপ ফেলবে— চিন্তায় গেরুয়া শিবির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন