দেবেন্দ্রর ইস্তফা, শপথের অপেক্ষায় উদ্ধব, বিজেপির মুখ পুড়ল মহারাষ্ট্রে

মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার ব্যাপারে তিন দলের সমঝোতা যখন প্রায় চূড়ান্ত, তখন শুক্রবার মাঝ রাতে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করে বিজেপি। এনসিপি ভেঙে ফডণবীসের হাত ধরেন শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share:

অভিবাদন: শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে অভিনন্দন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ােরর। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। পিটিআই

মহারাষ্ট্রে রণে ভঙ্গ দিল বিজেপি। বুধবারই বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে দেবেন্দ্র ফডণবীসকে— আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে প্রথমে ইস্তফা দেন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। তার কিছু পরেই ৮০ ঘণ্টার মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইতি টেনে পদত্যাগ করেন ফডণবীস।

Advertisement

রাতে মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠকে জোটের নেতা নির্বাচিত হন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন এনসিপির জয়ন্ত পাটিল ও কংগ্রেসের বালাসাহেব থোরাট। রাত দশটা নাগাদ রাজ্যপালের কাছে গিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানান জোটের নেতারা। সেই দাবি মেনে বৃহস্পতিবার শিবাজি পার্কে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে বলে উদ্ধবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।

মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার ব্যাপারে তিন দলের সমঝোতা যখন প্রায় চূড়ান্ত, তখন শুক্রবার মাঝ রাতে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করে বিজেপি। এনসিপি ভেঙে ফডণবীসের হাত ধরেন শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত। দাবি করেন এনসিপির অধিকাংশ বিধায়কই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। এর পর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের সুপারিশ দিল্লি পাঠান রাজ্যপাল। নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছাড়াই সেই সুপারিশে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোর পৌনে ছ’টায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সইয়ের পরে উঠে যায় রাষ্ট্রপতি শাসন। শনিবার সকাল আটটায় শপথ নেন দেবেন্দ্র ও অজিত।

Advertisement

বিজেপি সূত্র দাবি করে, নিঃশব্দে নেপথ্যে থেকে ‘বাজিমাত’ করেছেন দলীয় সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু হাল ছাড়েননি শরদ পওয়ার। একদা ইন্দিরা, রাজীব, সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে টক্কর নেওয়া শরদ ৭৯ বছর বয়সে এসেও দেখিয়ে দিলেন, মরাঠা রাজনীতিতে এখনও তিনিই স্ট্রংম্যান। তাঁর কাছে পর্যুদস্ত হতে হল গোয়া, মণিপুর, হরিয়ানায় কৌশলে সরকার গড়ে বিজেপির ‘চাণক্য’ হয়ে ওঠা শাহকে।

হতাশ ফডণবীস আজ দাবি করেন, অজিতের উপর ভরসা করেই সরকার গড়তে ঝুঁকি নিয়েছিল দল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই সমর্থন আসেনি। এনসিপি ভাঙেনি। উল্টে যারা অজিতের সঙ্গে গিয়েছিলেন, এক এক করে শরদ শিবিরে ফিরে যান তাঁরা। বিজেপির এ-ও আশা ছিল যে, শিবসেনা ও কংগ্রেসের বিধায়কদের ভাঙিয়ে আনা সম্ভব হবে। ব্যর্থ হয় তা-ও। গত কাল মুম্বইয়ের হোটেলে ১৬২ জন বিধায়ককে হাজির করে বিজেপির আশায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন শরদ-উদ্ধবেরা।

মহারাষ্ট্রে বিজেপির কফিনে শেষ পেরেক হল সুপ্রিম কোর্টের রায়। দেবেন্দ্রদের আশা ছিল, রাজ্যপাল যখন শক্তিপরীক্ষার জন্য ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, তখন তাতে বাধা হবে না আদালত। কিন্তু শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ জানিয়ে দেয়, বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে সমস্ত বিধায়কের শপথগ্রহণ সেরে ফেলে সে দিনের মধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে বিজেপি-কে। ভোটাভুটি হবে প্রকাশ্যে। গোপন ব্যালটে নয়। যা সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে।

আদালত যখন এই রায় দিচ্ছে, তখন সংসদের সেন্ট্রাল হলে চলছিল সংবিধানের ৭০তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ সংসদেই প্রধানমন্ত্রীর ঘরে বৈঠক করেন শাহ। তত ক্ষণে মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীরা অটুট। কোনও ভাবেই ১৪৫ বিধায়কের ম্যাজিক সংখ্যা ছোঁয়া সম্ভব নয়। বৈঠকে ঠিক হয়, বিধানসভায় হারার চেয়ে ফডণবীস বরং আজই ইস্তফা দিন। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান তিনি।

এ দিকে, ‘অভ্যুত্থান’ ব্যর্থ হওয়ার পরে আবার ঘরে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন অজিত। দলের বৈঠকেও আসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে আসতে দেওয়া হয়নি। রাতে শরদের বাড়িতে যান অজিত। ছিলেন শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলেও। এনসিপি সূত্র বলছে, ভাইপোর ভবিষ্যৎ এখন কাকার হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন