দু’দিনও কাটেনি বিহারের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে বিহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণায় যখন সরগরম রাজনীতি, তখনই একই রকম আর্থিক সাহায্যের জন্য দরবার শুরু করল বিভিন্ন আঞ্চলিক দল। এদের মধ্যে বেশির ভাগ দলই হয় এনডিএ-এর সদস্য, নয়ত বিভিন্ন বিল পাশ করে সরকারকে সাহায্য করা বিজেপির ‘বন্ধু’ দল।
এনডিএ গঠনের একেবারে গোড়া থেকে যে দলগুলি বিজেপির পাশে ছিল, তার মধ্যে অন্যতম অকালি দল। সেই অকালি দলও বিহারকে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ায় ক্ষোভ উগড়ে গিয়েছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের শীর্ষনেতা প্রকাশ সিংহ বাদলের মতে, “রাজ্যের জন্য কোনও প্যাকেজের জন্য অনুরোধ করছি না আমরা। এটা আমাদের অধিকার। দেশের মধ্যে যে রাজ্যের আর্থিক প্যাকেজের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তার নাম পঞ্জাব।”
একই দাবি তৃণমূল কংগ্রেসেরও। বহু দিন ধরেই রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের দাবিতে কেন্দ্রের কাছে দরবার করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারবার তুলেছেন বিগত বাম সরকারের করে যাওয়া ঋণ মকুবের আবেদন। বিহারকে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও রাজ্যকে আর্থিক প্যাকেজের বিরোধী নই আমি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এত দিনের দাবিকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজু জনতা দল। লোকসভায় ওড়িশার বর্তমান শাসকদলের নেতা জানান, “রাজ্যের জন্য এত দিন ধরে যা দাবি করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই পূরণ হয়নি। কেন্দ্র সম্ভবত বধির হয়ে গেছে। রাজ্যের দাবি মেটাতে এর পর থেকে আরও কড়া হবে দল।” তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার, এর পর থেকে বিজেডির সঙ্গে বোঝাপড়া করতে বেশ বেগ পেতে হবে কেন্দ্রকে।
কেন্দ্রের চিন্তা বাড়িয়েছে এনডিএ-র অন্যতম শরিক তেলুগু দেশম পার্টিও। বিশেষ রাজ্যের তকমা পেতে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ বার এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে ১১ বার দেখা করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বিহারের পর কোমর বাঁধছেন তিনিও। দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠকে বসছেন তিনি।
এ ছাড়াও রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। রাজ্যের জন্য ৪৪ দফা দাবি জানিয়ে কেন্দ্রকে এর মধ্যে শতাধিক চিঠি লিখেছেন তিনি। বিহার অধ্যায়ের পর তিনিও যে দর কষাকষি শুরু করবেন, সে ইঙ্গিতও স্পষ্ট।
ফলে বিধানসভা ভোটের আগে বিহারবাসীদের মন পেতে প্যাকেজ ঘোষণা করে রাজনীতির ময়দানে যে ডিভিডেন্ড তুলতে চেয়েছিল বিজেপি, সেই নীতিই এখন তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।