লোক এনে আর প্রচারে ত্রিপুরা ঘিরেছে বিজেপি

রাজ্যটা আসলে ‘লাল সরকারে’র! পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের লম্বা ইনিংস শেষ হওয়ার পরে গোটা দেশের বামপন্থীরা এই ছোট্ট রাজ্য নিয়েই গর্বিত। সেখানেও কি ২৫ বছর পরে তা হলে পরিবর্তনের হাওয়া?

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

আগরতলা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৮
Share:

বিমানবন্দর থেকে বেরোলেই চমকে যেতে হচ্ছে! মাত্র দু’মাস আগে দেখে যাওয়া শহরটা এত দ্রুত এত গেরুয়া হয়ে গেল!

Advertisement

রাজ্যটা আসলে ‘লাল সরকারে’র! পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের লম্বা ইনিংস শেষ হওয়ার পরে গোটা দেশের বামপন্থীরা এই ছোট্ট রাজ্য নিয়েই গর্বিত। সেখানেও কি ২৫ বছর পরে তা হলে পরিবর্তনের হাওয়া? ভোটের ত্রিপুরায় পা রাখলে তেমনই মনে হচ্ছে!

উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব জোরালো ভাবে দাবি করছেন, ‘‘শুধু মনে হওয়া নয়, পরিবর্তন আসছেই!’’ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে বগলদাবা করে তিনি আগরতলা ছাড়লেন নরেন্দ্র মোদীর পরবর্তী সফরের খুঁটিনাটি ঠিক করতে করতে। বাকি কাজ বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন ত্রিপুরার ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর এবং বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেবকে।

Advertisement

যদিও ত্রিপুরার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, হাওয়া দিলেই ঝড় ওঠে না। বাইরে যতই ডালপালা দেখা যাক, ভিতরে শিকড় তত পোক্ত নয়।

মানিক সরকারের ত্রিপুরা অবশ্যই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পশ্চিমবঙ্গ নয়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম জাতীয় কিছু এখানে ঘটেনি। বরং, সাক্ষরতায় দেশে এক নম্বর হওয়া, উপজাতি এলাকায় স্বশাসন এবং উন্নয়নের রাস্তা গড়ে শান্তি ফেরানোর মতো আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বলার মতো বেশ কিছু কাজ ত্রিপুরার বাম সরকার করেছে। তার পরেও এই ২০১৮-র মহাযুদ্ধে তাদের ঈষৎ বেসামাল লাগছে কেন? উত্তরটা লুকিয়ে বিজেপি-র সংগঠন এবং প্রচার যন্ত্রের তৎপরতায়। শাহের কথায়, ‘‘মোদীর জনপ্রিয়তা আর কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের সুফল আমরা পাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা সংগঠন গড়েছি। সিপিএম এত দিন যে ভাবে ভোট করিয়েছে, এ বার সে ভাবে পার পাবে না!’’

দেওধর দায়িত্বে আসার পরে যুব, মহিলা, তফসিলি-সহ দলের সব ক’টা মোর্চাকে সক্রিয় করেছে বিজেপি। রাজ্যের প্রায় ৩৪ হাজার বুথের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ৬০০ ‘শক্তি কেন্দ্র বিস্তারক’। যাঁদের এক এক জনের দায়িত্বে রয়েছে ৫টি করে বুথ। এঁদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন ভিন্ রাজ্য থেকে। ভোটের একেবারে দোরগোড়ায় এসে আরও ৪০০ ‘শক্তি কেন্দ্র বিস্তারক’ নিয়ে আসা হয়েছে অসম থেকে। এ ছাড়াও, প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র পিছু এক জন করে বিস্তারক তো আছেনই। অর্থাৎ উত্তর-পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্য এখন ঠাসা গেরুয়া বাহিনীতে!

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘চলো পাল্টাই’য়ের পক্ষে তু‌ফান তুলে বিজেপি-র বাহিনী সিপিএমকে অন্তত ১০ গোল দিয়ে তো বসে আছেই! শাহ এ বার প্রদেশ নেতাদেরও বলে গিয়েছেন, ক্ষমতায় আমরাই আসছি। তৈরি হোন!

ভোটের আগে ঝড় তুলে ফেললেও বিজেপি-র মূল সমস্যা অবশ্য দু’টো। এক, তারা কিছু প্রতিশ্রুতি দিলেই প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি-শাসিত ১৯টা রাজ্যের মধ্যে কোথায় এমনটা হয়েছে? আর দুই, প্রচার থেকে সংগঠন সামলানোয় তাদের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাইরের নেতারা।

সত্যিই কি মানিককে লাল কার্ড দেখিয়ে ত্রিপুরায় এ বার গেরুয়া শাসন? সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশের বক্তব্য, ‘‘ত্রিপুরার মানুষ সচেতন। মন ভোলানো কথায় তাঁরা বিভ্রান্ত হন না।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি ও ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য বলছেন, ‘‘অসম, মণিপুরে যা করা যায়, ত্রিপুরায় সেটা হয় না। বিজেপি জানে না, ত্রিপুরায় টাকা দেওয়া যায়, কিন্তু ভোট কেনা যায় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন