উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে রামজস বিতর্ক থেকে ফায়দা নিতে গিয়ে উল্টে মুখ পুড়ল বিজেপির। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বিরোধী বাম বা কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাই নয়, রাজনীতি নিরপেক্ষ ছাত্র-ছাত্রীরাই এখন শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে সরব হয়ে আজ পথে নেমেছে। সকলেই প্রশ্ন তুলছেন, শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দাদাগিরির বিরুদ্ধে।
ছাত্রছাত্রীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বকে। অথচ, গত সপ্তাহে রামজস কলেজের বিষয়টি সামনে আসার পরে বিজেপি মনে করছিল, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে বিতর্ক বাড়লে দলের ফায়দাই হবে। বিশেষ করে উমর খালিদের মতো ছাত্রদের উদাহরণ তুলে কী ভাবে দেশবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ক্রমশ কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি গাড়ছে, এবিভিপি কী ভাবে তার মোকাবিলা করছে— এ সব তুলে ধরার চেষ্টায় ছিল বিজেপি। কৌশলে প্রচার চালাতে চাইছিল দেশাত্মবোধের। এবং সেই লক্ষ্যে কী ভাবে বামপন্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নবাদীদের মদত দিয়ে এসেছে সেই উদাহরণ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু আজ বলেন, ‘‘এই বামপন্থীরা ১৯৬২ সালে চিন সৈন্যের হাতে ভারতীয় সেনার মৃত্যুতে খুশি হতো।’’
শুরুতে বিজেপির এই কৌশল খেটে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও, গুরমেহর কৌর প্রতিবাদে নামতেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসক শিবির। বিশেষ করে গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে গুরমেহরকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া এবং নিরাপত্তার অভাবে আজ তাঁর দিল্লি ছেড়ে যাওয়া, শহিদ কন্যার এই হেনস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন একজোট বিরোধী শিবির। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সেনা অভিযানের সাফল্য নিয়ে মোদী ছাতি ফোলান, অথচ, সেই সরকারের আমলে এক জন শহিদের কন্যাকে এমন ভাবে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে, তাঁর পালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকছে না।’’
রামজস কলেজের গণ্ডগোল ও গুরমেহরকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আজ তুমুল হইচই হয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও। বিরোধী দলের সাংসদদের প্রশ্নের মুখে কার্যত নিরুত্তর হয়ে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষি ও দিল্লি পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক।
আগামী সপ্তাহে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে চলেছে। অধিবেশন শুরুর ঠিক আগে বিরোধী ঐক্যে চিড় ধরাতে কংগ্রেসের একাধিক দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। কিন্তু আজ বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলগুলি যে ভাবে এককাট্টা ভাবে সরব হয়েছে, তাতে রামজস কাণ্ড উল্টে বিজেপির পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে বলেই মনে করছেন দলের অনেক নেতা।