বিহারে দলিত রাজ্যপাল, নয়া কাঁটা নীতীশের

উত্তরপ্রদেশ বিজেপির দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দকে আজ বিহারের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করল কেন্দ্র। এত দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই রাজ্যের ভার সামলাচ্ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ দিনই হিমাচলপ্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে আচার্য দেবব্রতকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

রামনাথ কোবিন্দ

উত্তরপ্রদেশ বিজেপির দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দকে আজ বিহারের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করল কেন্দ্র। এত দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই রাজ্যের ভার সামলাচ্ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ দিনই হিমাচলপ্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে আচার্য দেবব্রতকে। বিহারে একেবারে ভোটের মুখে এসে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে। কিছুটা ধর্মসঙ্কটেও। তাঁর কাছে দলিত-প্রসঙ্গ এখন এমনই এক কাঁটা, যা না-যায় গেলা, না-যায় উগরে ফেলা।

Advertisement

এমনিতেই জিতনরাম মাঁঝিকে যে ভাবে উৎখাত করেছেন নীতীশ, দলিতদের মধ্যে সেই স্মৃতি এখনও বেশ টাটকা। এখন এক জন দলিতকে রাজ্যপাল পদে নিয়োগের বিরোধিতা করলে দলিতদের কাছে ফের নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে। সে কারণে সরাসরি কোবিন্দের নিয়োগের বিরোধিতা এড়িয়ে যেতে হচ্ছে নীতীশকে। তা ছাড়া, রাজ্য বিজেপির নেতারা গত কিছু দিন ধরেই বিহারে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলছেন। সন্দেহ নেই, নয়া রাজ্যপাল এলে তাঁর কাছেও এই দাবি জানাবেন তাঁরা। এই অবস্থায় গোড়াতেই নয়া রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে তাঁকে বিরূপ করে তোলাটা নীতীশের পক্ষে বেশ ঝুঁকির। সম্ভবত সে কারণেই এ নিয়ে আজ কড়া কিছু বলেননি তিনি। রাজ্যপাল নিয়োগ কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় হলেও, সম্ভাব্য ব্যক্তিদের নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আগাম একপ্রস্ত আলোচনা করে থাকে কেন্দ্র। এটাই দস্তুর। নীতীশের শুধু অভিযোগ, ‘‘সেই পদ্ধতি মানা হয়নি। নিয়োগের কথা জানতে পেরেছি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে।’’ এ দিন রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়ে পটনায় মুখ খোলেন জেডিইউ-এর দলিত নেতা তথা মন্ত্রী শ্যাম রজক। তা-ও বেশ রেখেঢেকে।

অস্বস্তির দলিত প্রসঙ্গ আজ দিনভরই তাড়া করেছে নীতীশকে। বিহারে দলিতদের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে আজ দিল্লিতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এ দিন দিল্লির শ্রীরাম সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলতে শুরু করতেই জন অধিকারী দলের সাংসদ পাপ্পু যাদবের অনুগামীরা হইচই শুরু করে দেন। তাঁদের অভিযোগ, বিহারে দলিতদের উপর লাগাতার হামলা চলছে ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। নীতীশ বাধ্য হন থেমে যেতে। পরে রক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। ওই অনুষ্ঠান শেষ হতেই নীতীশ জানতে পারেন দলিত বিজেপি নেতা রামনাথ কোবিন্দকে রাজ্যপাল নিয়োগ করা হয়েছে তাঁর রাজ্যে।

Advertisement

কানপুরের বাসিন্দা রামনাথ দু’বারের রাজ্যসভা সাংসদ। আগে বিজেপির দলিত মোর্চার সভাপতি ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই রাজভবনে এক জন দলিতকে প্রতিষ্ঠা করেই বিহারের ভোটে দলিত ও মহাদলিত সম্প্রদায়কে কাছে পেতে চাইছে বিজেপি। তবু রামনাথের নিয়োগ নিয়ে জলঘোলা করতে চাইছেন না নীতীশ। বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘কোবিন্দের সমালোচনায় মুখর হলে দলিত-বিরোধী ভাবমূর্তি তৈরি হবে। ভোটের মুখে নীতীশ সেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।’’ কারণ নীতীশের লড়াই এখন দশ বছরে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার বিরুদ্ধে। দলিতদের সমর্থনে এখন ভাটার টান। বিপক্ষ শিবিরের দলিত মুখগুলিকেও উপেক্ষা করতে পারছেন না নীতীশ। রামবিলাস পাসোয়ান তো রয়েছেনই, দলিত নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি। তিনিও বিজেপির শরিক। নীতীশ যে ভাবে মাঁঝিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন দলিতদের একটি বড় অংশ তা ভাল ভাবে নেয়নি। সেই ক্ষোভকে নির্বাচনে কাজে লাগাতে তৎপর নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা। গত এক বছরে, বিহারের নানা প্রান্তে দলিত সমাজের উপর একাধিক অত্যাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। এখন নতুন রাজ্যপালের কাছে সেই সব ঘটনার তদন্তের দাবি জানাতে কোমর বাঁধছে রাজ্য বিজেপি। তাদের আশা, রাজভবনকে কেন্দ্র করে এ বার সামগ্রিক ভাবে দলিত সমাজকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। যার প্রতিফলন পড়বে ভোট ব্যাঙ্কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন