কর্নাটক

গরু খেলে মাথা কাটব, শাসানি মুখ্যমন্ত্রীকেও

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার আবহে নতুন বিতর্কের ইন্ধন জোগালেন কর্নাটকের এক বিজেপি নেতা। গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মুণ্ডচ্ছেদ করার হুমকি দিলেন প্রকাশ্যে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:১৯
Share:

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার আবহে নতুন বিতর্কের ইন্ধন জোগালেন কর্নাটকের এক বিজেপি নেতা। গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মুণ্ডচ্ছেদ করার হুমকি দিলেন প্রকাশ্যে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার একটি জমায়েতে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের অসহিষ্ণু নীতির সমালোচনা করে সিদ্দারামাইয়া মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আমি এখনই গোমাংস খেতে পারি। তাতে কার কী? কে কী খাবে সেটা তার ব্যক্তিগত রুচি এবং অধিকার।’’

সিদ্দারামাইয়ার এই মন্তব্যের প্রতিবাদে একটি প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় কর্নাটকের শিবামোগ্গা শহরের মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এস এন চান্নাবাসাপ্পা বলেন, ‘‘সাহস থাকলে এখানে এসে গোমাংস খেয়ে দেখান। সঙ্গে সঙ্গেই মুণ্ডচ্ছেদ করা হবে তাঁর।’’ এই মন্তব্যের পরেই বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সিদ্দারামাইয়া প্রতিক্রিয়া জানান, ‘‘এমন অসহিষ্ণুতা বিজেপির স্বভাবসুলভ, সে কারণেই তার বিরোধিতা দরকার।’’ এই মন্তব্যের পুলিশি তদন্তেরও নির্দেশ দেন তিনি। ঘটনার একটু পরেই উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে চান্নাবাসাপ্পাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে বিশিষ্ট জনেদের সরকারি পুরস্কার ফেরানোও জারি রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের ইতিহাসবিদ ও লেখক শেখর পাঠক পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন আজ। তিনি বলেন, ‘‘এম এম কালবুর্গী, গোবিন্দ পানসারের হত্যা, দাদরি-কাণ্ড, গুলাম আলিকে অনুষ্ঠান করতে না দেওয়া— এগুলো সবই বিচ্ছিন্নতার কথা বলছে। এই অসহিষ্ণুতা সহ্যসীমার বাইরে। প্রতিবাদটুকু ছাড়া আমরা আর কীই বা করতে পারি?’’

দেশ জুড়ে চলা এই অসহিষ্ণুতার বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে একটি যৌথ চিঠি লেখার জন্য আবেদন জানিয়ে আজ টুইট করেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেনও। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণবঙ্গ আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক জিষ্ণু বসু বলেন, ‘‘আমাদের বদনাম করার একটা চক্রান্ত চলছে। বিশিষ্ট জনেদের কেউ কেউ সেই চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। এ ছাড়া, অনেকে আছেন, যাঁরা ভারত নিয়ে চিন্তিত নন। বিদেশ নিয়ে চিন্তিত। আর কিছু মানুষ আমাদের সাফল্য পছন্দ করছেন না। তাঁরা এ সব বলছেন।’’

এই আবহেই একটু অন্য সুর শোনা গেল চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট অভিনেতা কমল হাসনের মুখে। অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে পুরস্কার ফেরানো অর্থহীন, জানিয়ে দেন তিনি। আজ তিনি বলেন, ‘‘পুরস্কার ফিরিয়ে কিছু হবে না। যারা ভালবেসে পুরস্কার দিয়েছিল, তাদের শুধু অপমানই করা হয়। এ ভাবে হয়তো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। কিন্তু পুরস্কার ফেরানো ছাড়াও তার আরও অনেক উপায় আছে।’’ অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘‘আমি অসহিষ্ণুতার পক্ষে নই। আমি নিজে ধার্মিক নই, কিন্তু ধর্মসহিষ্ণু।’’

কিছু দিন আগেই মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা প্রধান রাজ ঠাকরের সঙ্গে দেখা করে নানা মহলে প্রশ্ন জাগিয়েছিলেন কমল হাসন। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ ঠাকরের বাড়ির পাশেই এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রাজ ঠাকরের সঙ্গেও দেখা করে আসেন কমল। সেই ঘটনার পরপরই তাঁর আজকের মন্তব্য বিশেষ কোনও রাজনৈতিক ইঙ্গিত বহন করছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন