Indian Politics

ধর্তব্যের বাইরেই প্রবীণরা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বিজেপির মার্গদর্শক মণ্ডল

সদ্য ধুমধাম করে নিজের সরকারের দু’বছর পালন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর আজ কতকটা নিশ্চুপে জন্মদিন কেটে গেল বিজেপির নতুন জমানার তৈরি করা একটি কমিটির। সেটি হল মার্গদর্শক মণ্ডল।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ১৯:৫০
Share:

সদ্য ধুমধাম করে নিজের সরকারের দু’বছর পালন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর আজ কতকটা নিশ্চুপে জন্মদিন কেটে গেল বিজেপির নতুন জমানার তৈরি করা একটি কমিটির। সেটি হল মার্গদর্শক মণ্ডল।

Advertisement

দু’বছরের জন্মদিন কেটে গেল। অথচ বিজেপির এই পথপ্রদর্শক কমিটির একটিও বৈঠক হল না।

যে কমিটিতে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী। এবং আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ৭৫ বছর পার হয়ে যাওয়া প্রবীণ নেতাদের কোনও পদে না বসানোর এক অঘোষিত নীতি রূপায়ণ শুরু হয় গেরুয়া শিবিরে। সেই অঘোষিত নীতি ধরেই আডবাণী-জোশীর মতো প্রবীণ নেতাদের না রাখা হয়েছে দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী সংসদীয় বোর্ডে, না ঠাঁই দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বা সরকারের আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে। এ কথা আর কারও অজানা নয়, আসলে লোকসভা ভোটের আগে মোদীর উত্থানের সময় এই প্রবীণ-ব্রিগেডের কড়া বিরোধিতার জন্যই ক্ষমতায় আসার পর তাঁদের যাবতীয় দায়িত্ব থেকে দূরে রেখেছেন মোদী।

কিন্তু তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলতে থাকায় একটি গালভরা পদ তৈরি করা হয়েছিল ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’ নামে। সেখানেই এই প্রবীণ নেতাদের সদস্য করে রাখা হয়। সেই সময় দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই প্রবীণ নেতারা সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। তাই এই কমিটিতে থেকে তাঁরা দলের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পথে দেখাবেন। তাঁরা নিরন্তর পরামর্শ দিতে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, গত দু’বছরে কোনও সিদ্ধান্তেই না তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে, না তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়াতে সামিল করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত এই কমিটির একটিও আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।

আরও পড়ুন: গাঁধী হত্যায় সঙ্ঘকে দায়ী করিনি: রাহুল

আডবাণী ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, মার্গদর্শক মণ্ডলের জন্মলগ্ন থেকেই জানা ছিল এটি শুধু লোক দেখানো একটি কমিটি। কোন সময় দু’বছর কেটে গিয়েছে, টেরও পাওয়া যায়নি। এখন আডবাণীর সঙ্গে দেখা করার লোকজনও অনেক কমে গিয়েছে। বিজেপির ছোট-মাঝারি মাপের নেতারা আগে ভিড় জমাতেন, এখন তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন ক্ষমতাকেন্দ্রের ভর একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। স্ত্রী-বিয়োগের পর এখন অনেকটাই নিঃসঙ্গ আডবাণী। বই পড়েই বেশিরভাগ সময়টি কাটান। সংসদ চললে নিয়মিত যান, কারও জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে নিয়মিত হাজিরা দেন। আর চারটি সংসদীয় কমিটির বৈঠকও মন দিয়ে করেন।

আর এক প্রবীণ সদস্য মুরলী মনোহর জোশী অবশ্য এখন সক্রিয় দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে। ঘনঘন নাগপুরে গিয়ে তিনি সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। বিভিন্ন সেমিনার ও লেখাপড়া নিয়েই আছেন। তবে গত দু’বছরে এই পথপ্রদর্শক কমিটির একটি বৈঠক না হলেও বিজেপির এই প্রবীণ ব্রিগেড চুপ করে বসেছিলেন এমন নয়। বরং তাঁরা নিজেদের মতো করে প্রবীণ ব্রিগেডের সদস্য সংখ্যা আরও বাড়িয়ে মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধেই বারবার জিহাদ ঘোষণা করেছেন। যশবন্ত সিনহা, শান্তা কুমারদের সঙ্গে নিয়ে কখনও দিল্লি হারের পর, কখনও বিহারে ভরাডুবির পর, কখনও কীর্তি আজাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণের পর সরব হয়েছেন। প্রতিবারই এই প্রবীণ ব্রিগেডকে নিরস্ত করার জন্য বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘এঁরা দলের অনুপ্রেরক। তাই তাঁরা দলকে শাসন করতেই পারেন।’’ কেন দু’বছরে একটিও বৈঠক হল না? তার জবাবে দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘নানা বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে নিরন্তর পরামর্শ নেওয়া হয়।’’

কিন্তু সেই গতে বাধা বক্তব্য থেকে বেরিয়ে কোনও বিষয়েই তাঁদের সামিল করা হয়নি। তবে সম্প্রতি অবশ্য ইলাহাবাদে উত্তরপ্রদেশে ভোটের প্রচার শুরু করার সময় মোদী দু’পাশে আডবাণী ও জোশীকে নিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু তাঁদের কোনও বক্তব্য রাখতে বলা হয়নি। দলের বৈঠকেও তাঁদের রাখা হয়, কিন্তু বলতে দেওয়া হয় না। সংসদেও এই নেতাদের সম্প্রতি কোনও বিষয়ে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন