UP Assembly Election 2022

UP assembly election 2022: হিজাব-বিতর্কের মূলে কি উত্তরপ্রদেশে ভোটের হিসাব? ফায়দা দেখছে বিজেপি-ও

কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিয়ে কর্নাটকের বিতর্কে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ভোটে ফায়দাই দেখছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৪
Share:

ফাইল চিত্র।

কর্নাটকে কি আসলে লখনউয়ের বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে!প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।

Advertisement

কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিয়ে কর্নাটকের বিতর্কে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ভোটে ফায়দাই দেখছে। আসাদুদ্দিন ওয়েইসি উত্তরপ্রদেশের ময়দানে হিজাব বিতর্ককে হাতিয়ার করে মাঠে নেমে পড়েছেন। আর তার ফলেই শঙ্কিত বিরোধী শিবির। এসপি, আরএলডি, কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশের ভোটে মেরুকরণ তৈরি করতেই কর্নাটকে আচমকা হিজাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। ওয়েইসি হিজাবের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে নিশানা করবেন। বিজেপি তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করে হিন্দু ভোট কুড়িয়ে এই মেরুকরণের ফায়দা তুলবে। উল্টো দিকে, ওয়েইসি মুসলিমদের পক্ষে সরব হয়ে এসপি-আরএলডি-র মুসলিম ভোটে ভাঙন ধরাবে। তাতেও বিজেপিরই ফায়দা।

বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন শুরু হচ্ছে। জাঠ ও মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে গোড়া থেকেই বিজেপি হিন্দু মেরুকরণের কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ। কর্নাটকের হিজাব বিতর্ক তাতেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তেমনই আগামী বছরের মাঝামাঝি কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের প্রশ্নে এখন থেকেই বিজেপি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পরিকল্পিত ওই বিতর্কের ছক অনেক আগেই কষে রাখা হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে সেই ফাঁদে অজান্তেই মুসলিম ছাত্রীরা পা দিয়েছেন।

Advertisement

এই ফাঁদে পা দেবেন না বলে অখিলেশ যাদব, জয়ন্ত চৌধুরী এ বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটার নীতি নিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, হিজাবের পক্ষে সরব হতে গেলে জাঠ, ওবিসি, হিন্দু ভোটে ভাঙন ধরতে পারে। ওয়েইসি এই নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে অখিলেশদের আক্রমণ করছেন। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী আগেই এ বিষয়ে ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু গোটা বিষয় থেকে বিজেপিই ফায়দা তুলবে দেখে এখন কংগ্রেস সরাসরিই মেরুকরণের অভিযোগ তুলেছে। আজ কর্নাটকের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে ভোটের মেরুকরণ করতে কর্নাটকে হিজাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। হিন্দু ও মুসলিমদের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এর পিছনে রয়েছে।’’ সিপিএমের নেতা মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘লখনউয়ের বিরিয়ানির রেসিপি কর্নাটকে তৈরি হচ্ছে।’’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে যাওয়ার বিরোধিতা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তাল কর্নাটক। মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে কলেজে ঢোকার সময় এক দল পড়ুয়া গলায় গেরুয়া অঙ্গবস্ত্র ঝুলিয়ে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলছেন। রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই ওয়েইসি তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে প্রচার শুরু করেছেন। ছাত্রীদের হেনস্থাকারীদের তিনি ‘দুশমন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মুসকান নামের ছাত্রীটির পাল্টা ‘আল্লা হু আকবর’ ধ্বনির প্রশংসা করেছেন। বুধবার তাঁর মন্তব্য, ওয়েইসি সংসদে দাড়ি, টুপি নিয়ে ঢুকতে পারলে মুসকানরা কলেজে হিজাব পরে কেন ঢুকতে পারবে না? তাঁর দাবি, এ’টি সংবিধান প্রদত্ত ধর্মাচরণের অধিকার।

পাল্টা আক্রমণে বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালব্যের যুক্তি, ‘‘হিজাব পরা কবে থেকে আবার সাংবিধানিক অধিকার হল? যাঁরা সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে
সাংবিধানিক অধিকার পালন রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে প্রশাসনের। কর্নাটকে যা হচ্ছে তাতে বলা যায়, ছাত্রীরা ধর্মের নামে পড়াশুনো জলাঞ্জলি দিয়ে হিজাব পরায় বেশি আগ্রহী।’’ কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের অভিযোগ, হিজাব পরা নিয়ে জিদ করে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো হচ্ছে।

কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা আজ মহিলাদের অধিকারের প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, বিকিনি, ঘোমটা, জিনস হোক বা হিজাব, মহিলারা কী পরবেন, সেটা তাদের অধিকার। সংবিধান এই অধিকার নিশ্চিত করেছে। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা অবশ্য মনে করছেন, এর মধ্যে ঢুকলে শাহ বানো মামলার মতোই কংগ্রেসকে হাত পোড়াতে হবে।

এই প্রসঙ্গে বুধবার কর্নাটকের বিজেপি বিধায়ক এমপি রেণুকাচার্য বলেছেন, ‘‘স্কুলে বা কলেজের পড়ুয়াদের এমন পোশাকই পরা উচিত যাতে পুরো শরীর ঢাকা থাকে। ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে কারণ কিছু মহিলা এমন পোশাক পরছেন যা পুরুষদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, যা মোটেও ভাল নয়, কারণ আমাদের দেশে মহিলাদের একটা সম্মান আছে, আমরা তাঁদের মায়ের মতো দেখি।’’

এআইসিসি-তে কর্নাটকের ভারপ্রাপ্ত নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ তাই কর্নাটকের ছাত্রছাত্রীদের খোলা চিঠি লিখে সতর্ক করেছেন, বিজেপি আসলে বেকারত্ব, অর্থনীতির সঙ্কটের মতো সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে এই সব বিতর্ক তৈরি করছে। পড়ুয়াদের এই বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন