ভোটের ফলে চিন্তত মোদী-শাহ।
নতুন আসন জেতা তো দূরের কথা, নিজেদের জেতা আসনও ধরে রাখতে ব্যর্থ হল বিজেপি।
আজ দেশ জুড়ে উপনির্বাচনের ফল দেখে রাজনীতির বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, ক্রমশ স্তিমিত হয়ে পড়েছে মোদী ঝড়। গোরক্ষপুর-ফুলপুরে হারের পর আজ এই ফলাফল লোকসভা ভোটের এক বছর আগে দলের জন্য অশনিসঙ্কেত বলেই মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। মেরুকরণের কৌশল ব্যর্থ হওয়ায় নতুন প্রচারের কৌশল দ্রুত নিতে চাইছে দল। বিশেষত বিরোধী ঐক্য আরও জোরদার হবে বুঝতে পেরে, তা ভেঙে দেওয়ার ছক যেমন তৈরি করা হবে, তেমন উদ্ধব ঠাকরেদের মতো শরিকের ক্ষোভ প্রশমনেও সক্রিয় হবে তারা।
উত্তরপ্রদেশে কৈরানার ফলাফলে উদ্বিগ্ন বিজেপি। হিন্দি বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে মেরুকরণের রাজনীতি করে চার বছর আগে ওই কৈরানায় মোট ভোটের ৫০ শতাংশ পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। জাঠ, দলিত, ওবিসি সকলেই চোখ বুজে ভরসা করেছিলেন পদ্মে। কিন্তু কৈরানা লোকসভা কেন্দ্রে হার থেকে ইঙ্গিত, গোবলয়ে জমি হারাচ্ছে বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের যোগ্যতা নিয়েও।
কর্নাটকের পরে উপনির্বাচনের ফলাফলের পর মোদী-বিরোধী হাওয়া যে আরও জোরালো হতে চলেছে, তা আঁচ করতে পারছেন বিজেপি নেতারা। আজকের হার নিয়ে উত্তরপ্রদেশর সাংসদ তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের মন্তব্য, ‘‘বড় লাফ দেওয়ার জন্য দু’পা পিছিয়ে আসতেই হয়।’’ বিজেপির একাংশ বলছে, দলের আত্মসমীক্ষার যে প্রয়োজন রয়েছে, এ কথা বলে সেই বিষয়টি উস্কে দিতে চেয়েছেন ওই ঠাকুর নেতা। মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের দাবি, ‘‘উপনির্বাচনে লোকে স্থানীয় বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই ভোট দেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীকে দেখা হয় না।’’
গত চার বছর ধরে গ্রামীণ ভারতের অসন্তোষ যে বাড়ছে, তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু অমিত শাহ শিবিরের মতে, গত চার বছরে সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থে যা কাজ করেছে, তা সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারলেই ভোট বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব। সেই কারণে ঘটা করে জনসম্পর্ক কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে দল। সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে ময়দানে নামছেন প্রায় চার হাজার শীর্ষ বিজেপি নেতা ও কয়েক লক্ষ সাধারণ কর্মী।
তবে দলের অন্য একটি অংশ মনে করে, গ্রামীণ এলাকার মানুষের ক্ষোভ নিরসন বা দলিত সমাজের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ দল। কৃষক সমাজের ঋণ মকুব না হলেও, কী ভাবে নীরব মোদী-বিজয় মাল্যদের ঋণ মকুব করা হয়েছে তা নিয়ে বিরোধীদের সফল প্রচারে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে গ্রামে। তেল-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমানোর মতো ঘটনাও বিপক্ষে গিয়েছে বিজেপির। তাতে এক দিকে যেমন বয়স্ক মানুষেরা মুখ ফেরাচ্ছেন, তেমন নতুন কর্মসংস্থানে ব্যর্থতার কারণে যুব শ্রেণি দূরে সরে যাচ্ছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘মানুষের মূল সমস্যার সমাধান না করে শুধু প্রচারে উজ্জ্বল ভারতের স্বপ্ন তুলে ধরলে ফের শাইনিং ইন্ডিয়ার মতো বিপর্যয় হবে।’’