সংসদ চত্বরে নভজোৎ সিংহ সিধু। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
ও গুরুরুরুরুরু…. তোকে দিয়ে নিজের কাশিই ঠিক হয় না, দিল্লি আবার ঠিক কী হবে? ড্রামার পর ড্রামা, নাটক কোম্পানি খুলে বসে আছে।
নিজস্ব ছন্দে তুই-তোকারি করে যাঁকে এই কথাগুলি বলা হয়েছিল, তিনি অধুনা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। আর যাঁর মুখ থেকে এই বাক্য নিঃসৃত হয়েছিল, তিনি নভজোৎ সিংহ সিধু। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির তারকা প্রচারক। সে দিন যে দলের প্রধানের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলেছিলেন সিধু, আজ সেই আম আদমি পার্টির পঞ্জাবের মুখ হতেই রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। আর সেটিও বেশ নাটকীয় ভাবে। ফলও মিলল হাতেনাতে। জুটল খোদ কেজরীবালের থেকে প্রশস্তিবাক্য— ‘‘আমি সাহসের জন্য সিধুকে স্যালুট জানাই। তিনি নিজের রাজ্যকে বাঁচাতে রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দিলেন।’’
পরনে সাদা চুড়িদার-শেরওয়ানি। পায়ে হলুদ নাগরা, মাথায় ম্যাচিং হলুদ পাগড়ি। আজ সকালে যখন সংসদ ভবনে ঢুকছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার, বিজেপির তাবড় তাবড় নেতাও কিছু আন্দাজ করতে পারেননি। সংসদ ভবনে পৌঁছে সিধু প্রথমেই বলেন, ‘‘পঞ্জাবের মানুষ বদল চাইছে।’’ তারপরে ইস্তফাপত্রটি সঁপে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির হাতে।
হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন? ইস্তফা পত্রে সিধু লিখেছেন, ‘‘পঞ্জাবে উন্নয়নমূলক কাজ করতে মাস তিনেক আগে আমি প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। কিন্তু এই কয়েক মাসেই দেখেছি, এই রাজ্যের উন্নতির জন্য প্রতিটি জানলাই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমার কাছে এই পদটি তাই এখন বোঝার মতো হয়ে উঠেছে। এই বোঝা আর টানতে চাই না।’’ প্রাক্তন সাংসদ আরও বলেন, ‘‘সত্য-মিথ্যার এই লড়াইয়ে তো নিরপেক্ষ বা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকা যায় না। পঞ্জাবের স্বার্থকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’’
ইস্তফার খবর দাবানলের মতো
ছড়িয়ে পড়ে সংসদ ভবনে। রাজ্যসভায় তখন কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। খবরটি প্রথমে অরুণ জেটলির কানে আসে। এক সময় তাঁর হাত ধরেই অমৃতসর থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন সিধু। খবর শুনে হতবাক হয়ে যান জেটলি। কয়েক বছর ধরেই অবশ্য জেটলি-সিধুর সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। বিশেষ করে, গত লোকসভায় সিধুর পরিবর্তে জেটলি নিজে অমৃতসর কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে চাওয়ায় এই বিরোধ আরও বেড়ে যায়। সিধুর এতে প্রবল আপত্তি ছিল। এবং জেটলিকে সেই কেন্দ্র থেকে হারানোর পিছনেও সিধুর কিছুটা হাত ছিল বলে বিজেপিরই অনেকের অভিযোগ। অনেকেই মনে করছেন, এই তরজাকে হাতিয়ার করে মোক্ষম চাল চেলেছেন কেজরীবাল। আপ অনেক দিন ধরেই পঞ্জাবে একটি মুখ খুঁজছিল। সামনের বছরই সেখানে নির্বাচন। সিধু সে ক্ষেত্রে কেজরীবালের মাস্টারস্ট্রোক বলে মনে করছেন আম আদমি পার্টির নেতারাও।
শুধু সিধু নন, তাঁর স্ত্রী নভজোৎ কউরও বিজেপি থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন বলে খবর। ফেসবুকে গত ১ এপ্রিলই তিনি ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন। পরে দল তাঁকে বোঝাতে সেটিকে ‘এপ্রিল ফুল’ বলে উড়িয়ে দেন। আপে সিধুর যাত্রা ঠেকাতেই তাঁকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ করে নিয়ে এসেছিলেন নরেন্দ্র
মোদী-অমিত শাহরা। আর এখন সিধুর এই আকস্মিক বিদায়ে মোদী-অমিতরা বড় ধাক্কা খেয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই। পঞ্জাবে বিজেপির শরিক অকালির সাংসদ নরেশ গুজরালও বলেন— ‘‘এটা তো মোদী, অমিত, জেটলির কাছে বড় ধাক্কা।’’ জেটলিও ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, সিধুর স্ত্রীকে ধরে রাখার জন্যও আর চেষ্টা করা হবে না।
পঞ্জাবে এখন বিজেপি-অকালি সরকারের বিরুদ্ধে হাওয়া প্রবল। আপ সেখানে হু-হু করে ঢুকছে। অন্য দিকে, ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে কংগ্রেসও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এই অবস্থায় পঞ্জাবে সরকার গড়তে সিধুর মতোই ওজনদার পঞ্জাবি মুখ দরকার ছিল কেজরীবালের। আপ মনে করছে, এ বার নির্বাচনে আসল লড়াইটা হবে সিধু বনাম ক্যাপ্টেনের। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা অবশ্য রসিকতা করে বলেন, ‘‘সিধু মুখ্যমন্ত্রী হলে কমেডি সিরিয়ালগুলোর কী হবে!’’