অমিতের হিন্দি-বাণে বিদ্ধ দক্ষিণী বিজেপি

লোকসভা ভোটে দেশের অন্যান্য প্রান্তে বিপুল সাফল্যের মধ্যেও কেরল, তামিলনাড়ুতে সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০০
Share:

ছবি: পিটিআই।

বাইরে দেশ জুড়ে ঝড় তো উঠেছেই। সরব হয়েছেন বিরোধী নেতা-নেত্রী ও বিশিষ্ট জনেরা। তাঁর হিন্দি-বাণে একই সঙ্গে ঘরের অন্দরেও সঙ্কট ডেকে এনেছেন অমিত শাহ!

Advertisement

লোকসভা ভোটে দেশের অন্যান্য প্রান্তে বিপুল সাফল্যের মধ্যেও কেরল, তামিলনাড়ুতে সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানাতেও প্রধান শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে আঞ্চলিক দল। দক্ষিণী রাজ্যগুলির মধ্যে কর্নাটকে বিজেপি একক ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। লোকসভা ভোটের ওই ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণী রাজ্যের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে জনসংযোগের হাতিয়ার করতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু এখন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের হিন্দিকেই দেশের ‘একতার গ্রন্থি’ বলে বর্ণনা দক্ষিণের বিজেপির সেই প্রয়াসকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। সংশয়ে পড়েছেন দক্ষিণী নেতারা!

মানসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে দক্ষিণ ভারতের মানুষ বিজেপিকে গ্রহণ করতে এখনও দ্বিধায় আছেন, লোকসভা ভোটের পরে ময়না তদন্তে এমন কারণই খুঁজে পেয়েছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। তার পর থেকেই তামিল, মালয়ালম, কন্নড় বা তেলুগুতে জনসংযোগ তীব্র করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের নানা মনীষীকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ও অন্যত্র প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। এই প্রচার কৌশলের উদ্দেশ্য, বিজেপি শুধুই হিন্দি বলয়ের দল— এই ধারণাকে খণ্ডন করা। কিন্তু শাহের মন্তব্যের পরে কেরল বিজেপির এক নেতা বলছেন, ‘‘দক্ষিণ ভারতের মানুষ ভাবছেন, ঘুরে-ফিরে আমাদের উদ্দেশ্য সেই একই! হিন্দি শিখতে ও বলতে সকলকে বাধ্য করা!’’

Advertisement

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন শাহের মন্তব্যকে সরাসরি ‘যুদ্ধের ডাক’ বলে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, দেশের ৪৫%-এর বেশি মানুষ যেখানে হিন্দিতে কথা বলেন না, সেখানে হিন্দিকেই একতার সূত্র বলে দেখানোর অর্থ অন্যান্য ভাষা-ভাষীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মনোভাবে দেশের বৈচিত্র্যের পরম্পরাও ধ্বংস করার অভিপ্রায় আছে বলে বিজয়নের মত। তামিলনাড়ুর দুই প্রধান দল ডিএমকে এবং এডিএমকে একই সুরে জানিয়ে দিয়েছে, হিন্দি চাপানো হলে প্রতিরোধ হবেই। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে তৃণমূল আপত্তি তুলেছে, এসইউসি-র মতো দল শাহের মন্তব্যকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ বলেছে। এমতাবস্থায় অস্বস্তি সামাল দিতে সব রকম চেষ্টা করতে হচ্ছে বিজেপির দক্ষিণী নেতাদের।

তামিলনাড়ুর নেতা এবং বিজেপির জাতীয় সম্পাদক হরিহরণ রাজা রেলের পরিষেবা কমিটিতে গিয়ে তামিল-সহ দক্ষিণী ভাষার ট্রেনের টিকিট ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই রাজার ব্যাখ্যা, ‘‘শাহ তো বলেছেন, সব ভাষারই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আছে। আমরা অন্য কোনও ভাষার বিরোধী নই!’’ কেরল বিজেপির রাজ্য সভাপতি পি শ্রীধরন পিল্লাইয়ের বক্তব্য, ‘‘আঞ্চলিক ভাষায় আদানপ্রদান তো চলবেই।’’ আবার অন্ধ্রে বিজেপির পর্য়বেক্ষক সুনীল দেওধরকে বোঝাতে হচ্ছে, ‘‘আমার মাতৃভাষা মরাঠি। ত্রিপুরায় গিয়ে বাংলা শিখেছি। অন্য ভাষার প্রতি বিদ্বেষ আমাদের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন