গুলাম আলিকে আমন্ত্রণ রাজ্যে

মুখ পুড়ছে বুঝে শিবসেনার নিন্দায় বিজেপিও

উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে স্রেফ গুজবের জেরে সংখ্যালঘু এক প্রৌঢ়কে পিটিয়ে মারার ঘটনা নরেন্দ্র মোদী জমানায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিযোগকে সামনে এনে দিয়েছে। গোমাংস নিয়ে বিতর্কের জেরে আজও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার মধ্যে এক নির্দল সদস্যকে বেদম পিটিয়েছেন বিজেপি বিধায়করা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে স্রেফ গুজবের জেরে সংখ্যালঘু এক প্রৌঢ়কে পিটিয়ে মারার ঘটনা নরেন্দ্র মোদী জমানায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিযোগকে সামনে এনে দিয়েছে। গোমাংস নিয়ে বিতর্কের জেরে আজও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার মধ্যে এক নির্দল সদস্যকে বেদম পিটিয়েছেন বিজেপি বিধায়করা। দু’টি ঘটনায় যথেষ্ট চাপে বিজেপি নেতৃত্ব। এতটাই যে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে সংহতির কথা বলতে হয়েছে।

Advertisement

এমন একটা সময়ে বিজেপির কপালের ভাঁজ গভীর করেছে তাদেরই আর এক শরিক শিবসেনা। তাদের হুমকিতে বন্ধ করে দিতে হয়েছে মুম্বই এবং পুণেয় পাকিস্তানের জনপ্রিয় গজল গায়ক গুলাম আলির দু’টি অনুষ্ঠান। শিবসেনার এই রাজনীতিতে অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সরকারের মন্ত্রী তথা মহারাষ্ট্রের শীর্ষ বিজেপি নেতা নিতিন গডকড়ী শিবসেনার আচরণের নিন্দা করে বলেন, ‘‘পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতা করা উচিত। তাদের ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের বিরোধিতা করা উচিত। কিন্তু কোনও শিল্পীর বিরোধিতায় আমরা বিশ্বাস করি না!’’ এখানে না থেমে গড়কড়ী বলেছেন, ‘‘আমি নিজে গুলাম আলির এক জন বড় ভক্ত। রোজ সকালে তাঁর গান শুনি।’’ তবে ক্ষত মেরামতির এই প্রয়াসে যে গুলাম আলি-বিতর্ক থামার নয়— তা বুঝছে কেন্দ্র। গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামাবাদ। তাদের যুক্তি, ভারতের কোনও শিল্পীকে নিয়ে এমন আচরণ কখনও করেনি পাকিস্তান। এই আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। দু’দেশের মানুষের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এই সিদ্ধান্ত। এই গজল শিল্পীর অনুষ্ঠান নিয়ে বিরোধীরা যে রাজনীতি শুরু করেছে, সেটাও অস্বস্তি বাড়িয়েছে বিজেপির। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সঙ্গীতের কোনও সীমান্ত হয় না। গুলাম আলিজির অনুষ্ঠান কলকাতাতেও হতে পারে। আমরা সব ব্যবস্থা করব।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও একই আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘গুলাম আলি দিল্লিতে অনুষ্ঠান করুন। রাজ্য সরকার পাশে থাকবে।’’

শুধু দল নয়, গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারও। এই নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ। শুধু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, ‘‘এটা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের মন্ত্রকের কী-ই বা বলার থাকতে পারে!’’ এটা ঠিক যে পাকিস্তানের কড়া বিবৃতির পরে ভারত যুৎসই জবাব দিতে পারল না— এই নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই। এ জন্য শিবসেনাকেই দায়ী করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

Advertisement

শিবসেনা অবশ্য মনোভাবে অনড়। তাদের বক্তব্য, সীমান্তে পাকিস্তান যখন প্রতিদিন ভারতীয় সেনাদের হত্যা করছে, তখন সে দেশের গায়কের গানে ভারতীয়ের মন ভাসিয়ে দেওয়া উচিত নয়। শিবসেনার যুব শাখার সভাপতি আদিত্য ঠাকরে বলেন, ‘‘যখন দেশের সেনারা লড়াই করছে, তখন আমাদের আমোদ করা মানায় না। সন্ত্রাসবাদ এবং সংস্কৃতি একসঙ্গে চলতে পারে না।’’

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছেন শিবসেনার এই সিদ্ধান্ত অবাঞ্ছিত। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে দু’দেশের বাণিজ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী মোদীও। তা ছাড়া গুলাম আলির জনপ্রিয়তা ভারতে আকাশছোঁয়া। শাবানা আজমি, তসলিমা নাসরিনের মতো বিশিষ্টরা শিবসেনার এই হুমকির নিন্দায় সরব হয়েছেন। এই ঘটনা যে তাঁর সরকারের ভাবমূর্তিতে টোল ফেলছে, তা টের পাচ্ছেন মোদী। বিষয়টিকে বিজেপি-শিবসেনা সম্পর্কের ঐতিহাসিক পুনরাবৃত্তি হিসাবেও দেখছেন অনেকে। ষোলো বছর আগে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের আগে পিচ খুঁড়ে দিয়েছিল শিবসেনা। তখন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এই কাজের তীব্র নিন্দা করেন।

ক্রিকেটের পর এ বার সেই আঘাত ফিরে এল সঙ্গীতেও।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

রাষ্ট্রপতির ঠেলায় সম্প্রীতির বার্তা মোদীর

‘বিফ পার্টি’ দেওয়ায় বিধানসভাতেই বিধায়ককে মার বিজেপি-র

গুলাম আলিকে আমন্ত্রণ জানালেন মমতা, কেজরীবাল

ভারত কি ‘হিন্দু সৌদি’ হওয়ার পথে? গুলাম আলি কাণ্ডে প্রশ্ন তসলিমার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন